মঙ্গলের কক্ষপথে সফল প্রবেশ, আমিরাতের ইতিহাস

অনলাইনডেস্ক, ১০ ফেব্রুয়ারী। । সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাঠানো মহাকাশ যান হোপ মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করেছে। গত বছরের জুলাইয়ে মঙ্গল অভিযান শুরু করে দেশটি। এটি প্রথম কোনো আরব দেশে মঙ্গল অভিযান। বিবিসি জানায়, মঙ্গলবার রাতে লালগ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে মহাকাশ যান হোপ। এর ফলে মহাকাশ গবেষণায় মঙ্গলে যান পাঠানো দেশের মধ্যে পঞ্চম শক্তিতে পরিণত হলো আমিরাত।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইউরোপ এবং চীন মঙ্গলগ্রহে অনুসন্ধান চালিয়েছে। মঙ্গলের উদ্দেশ্যে এই যানটি পৃথিবী ছেড়ে গেছে সাত মাস আগে। কিন্তু মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ভেতরে ঢুকে পড়তে এটিকে কিছুটা সময় ক্ষেপণ করতে হয়েছে। আমিরাতের বিজ্ঞানীরা এখন হোপের মাধ্যমে ওই গ্রহটির পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার পর তা নিয়ে গবেষণা করবেন। স্যাটেলাইটে যুক্ত তিনটি যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হবে এক সময়ে মঙ্গলে যে প্রচুর পানি ছিল তা কোথায় হারিয়ে গেল।

সেখান থেকে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের ক্ষুদ্রতম একক বা নিউট্রাল অ্যাটম সংগ্রহ করে এই পরীক্ষা চালানো হবে। এছাড়া ওই গ্রহটি থেকে হাই রেজুলেশনের অত্যন্ত উচ্চ মানের ছবিও পৃথিবীতে পাঠাবে হোপ। পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণের পর যানটি ঘণ্টায় এক লাখ ২০ কি.মি. গতিতে মঙ্গল গ্রহের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু মঙ্গলের কক্ষপথে উঠে পড়ার আগে পথচ্যুত হয়ে যন্ত্রটি যাতে মহাকাশের গভীরে হারিয়ে না যায় সেজন্য ২৭ মিনিটের জন্য এর গতি কিছুটা কমাতে হয়েছিল।

যানটির ভেতরে থাকা কিছু যন্ত্রের সাহায্যে এটা করা হয় এবং এর ঠিক ১১ মিনিট পরে এই খবর পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। মঙ্গল ও পৃথিবীর মধ্যে যে ১৯ কোটি কিলোমিটার দূরত্ব সেই পথ পাড়ি দিয়ে সংকেত পৃথিবীতে এসে পৌঁছাতে এই সময় লেগেছে। এ সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিজ্ঞানীদের মধ্যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মোহাম্মদ বিন রশিদ মহাকাশ কেন্দ্রে তারা যেন ঠিক এই মুহূর্তটির জন্যই এতদিন অপেক্ষা করছিলেন।

হোপ মিশনের প্রকল্প পরিচালক ওমরান শরাফ বলেন, ‘মঙ্গল গ্রহে আমাদের যাত্রায় সবচেয়ে বিপজ্জনক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল গ্রহটির কক্ষপথে প্রবেশ করা। এসময় মহাকাশ যান হোপ যে ধরনের চাপের মুখে পড়েছে সেরকম অভিজ্ঞতা এর আগে তার কখনো হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একটা বিরাট মাইলফলক অর্জন করেছি। এখন আমরা বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে গবেষণা শুরু করার জন্য অপেক্ষা করছি।

গত কয়েকদিন ধরে আমিরাতে এই হোপ মিশনের পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। সরকারি সব স্তম্ভ, ভবন এবং ঐতিহ্যপূর্ণ স্থানগুলোতে লাল আলো জ্বালানো হয়।সর্বোচ্চ ভবন দুবাই শহরের বুর্জ খলিফাতে আলো জ্বালিয়ে ঐতিহাসিক এই মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষণ-গণনা দেখানো হচ্ছিল। এই হোপ মিশনটিকে দেখা হচ্ছে পারস্য উপসাগরীয় এই ছোট দেশটির জন্য বিরাট সাফল্য হিসেবে। সাত বছর আগে তারা এরকম একটি মিশন পাঠানোর কথা প্রথম চিন্তা করেছিল।

আমিরাতের প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ও মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চেয়ার সারাহ আল আমিরি বলেন, ‘আমরা মঙ্গলে পৌঁছাতে চেয়েছি, আমি আসলেই কৃতজ্ঞ, মনে হচ্ছে কাঁধের ওপর থেকে সাত বছরের একটা ভার নেমে গেছে।’ হোপ এখন মঙ্গলের চারদিকে উপবৃত্তকার কক্ষপথে ঘুরছে।

আগামী কয়েকদিনে মধ্যে এটি তার নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। যে স্যাটেলাইটের পথ ধরে হোপ মঙ্গলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সেগুলো আগের স্যাটেলাইটগুলোর পথের চেয়ে একেবারে আলাদা। ফলে এটি এখন মঙ্গলের অনেক কাছে যেতে পারবে এবং সেখান থেকে মঙ্গল-পৃষ্ঠের অত্যন্ত উঁচু মানের ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাতে সক্ষম হবে।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?