ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাঁধ দিচ্ছে চীন

অনলাইন ডেস্ক, ৮ ফেব্রুয়ারী।। তিব্বত অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র নদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধ দিতে যাচ্ছে চীন। হিমালয়ের পাদদেশে যেখানে প্রাচীন ইয়ারলং সভ্যতায় প্রথম তিব্বতি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সেখানেই বসছে এ বাঁধ।সোমবার আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে জানায়, গত নভেম্বরে তিব্বতের ইয়ারলং সাংপো নদে ৬০ গিগাওয়াটের একটি বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা প্রকাশ করে বেইজিং।

চীন থেকে এ নদটি ভারতের অরুণাচল ও আসাম হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যেটি ব্রহ্মপুত্র নদ হিসেবে পরিচিত। ফলে এ বাঁধ নির্মাণের ফলে ভাটির দেশ ভারত ও বাংলাদেশে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য নিয়ে এই জলবিদ্যুৎ বাঁধকে দ্বিগুণ করতে যাচ্ছে চীনা সরকার। যার ফলে এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ।

পশ্চিম তিব্বতের হিমবাহ থেকে সৃষ্ট ইয়ারলং সাংপো নদের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫ হাজার মিটার। হিমালয় অঞ্চলের সর্পিল পথ ধরে বয়ে চলা ইয়ারলং সাংপো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু নদ।রাষ্ট্রীয় সংবাদ পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস জানায়, ইয়ারলং সাংপো বাঁধটি নির্মাণ করা হবে মেডগ কাউন্টিতে, যার জনসংখ্যা ১৪ হাজার।

বাঁধ নির্মাণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাওয়া এসব মানুষের বিষয়ে জানতে চাইলে চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে আলজাজিরা জানিয়েছে।এর আগে ইয়ারলং সাংপোতে আরেকটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নজির আছে। ২০১৫ সালে অন্তত দুই হাজার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।

এখন পর্যন্ত চীনের সবচেয়ে বড় বাঁধ থ্রি জর্জের চেয়েও তিনগুণ বেশি জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করবে তিব্বতে নতুন প্রকল্পটি। থ্রি জর্জ নির্মাণের সময় ১৪ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ইয়ান ঝিয়ং জানাচ্ছেন, সবুজ চীনের ভবিষ্যতের জন্য এসব মেগা বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।

তিবেতিয়ান পলিসি ইনস্টিটিউটের এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান তেমপা গায়ালতসেন জামলহা জানান, তিব্বত মালভূমির অনন্য প্রকৃতি থেকে বিশ্বের এই প্রাকৃতিক নিদর্শনের সৃষ্টি এবং এটি বহু শত বছরের আগের।তিনি বলছেন, ১৯৫০ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তিব্বতের নিয়ন্ত্রণ নিলে তিব্বতবাসীরা তাদের ভূমিতে যা ছিল সবকিছুই হারিয়ে ফেলেছে।

জামলহা বলেন, ‘চীন এ ভূমি দখলের আগে আমাদের কোনো বাঁধ ছিল না। তার মানে এ নয় যে, আমরা এটি করতে পারতাম না। কিন্তু নদীগুলোর প্রকৃতির ওপর আমাদের অগাধ সম্মান ছিল।’শুরু থেকে ইয়ারলং সাংপোতে বাঁধের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছেন দেশি বিদেশি পরিবেশ ও অধিকার সংগঠকেরা।

এ বাঁধের ফলে ভারত ও বাংলাদেশে হঠাৎ বন্যা ও নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যাপক হারে বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।ফলে বাঁধটিকে ঘিরে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি সংঘাতের আশঙ্ক দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রাকৃতিক সম্পদ ভাগাভাগির ক্ষেত্রে উভয়পক্ষকে রাজি করাতে চেষ্টা করছে মার্কিন প্রশাসন। যদিও বেইজিং এতে সাড়া দেবে কী না সেটি অনিশ্চিত।

অন্যদিকে, এ বাঁধের প্রতিক্রিয়ায় ব্রহ্মপুত্রের আরেকটা শাখায় ১০ গিগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ বাঁধ বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে ডিসেম্বরে এক বিবৃতিতে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিয়িং বলেন, ‘চীন বিদ্যমান সম্পর্কের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে। বাইরের বিশ্বকে এ নিয়ে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই।’

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?