নতুন প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জানুয়ারি।। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে অরাজনৈতিক মঞ্চের মিছিলেও কেঁপেছে রাজপথ। আজ আগরতলায় বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের ডাকে সাড়া দিয়ে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে মিছিলে পা মিলিয়েছেন। গতকালও আগরতলায় নারী নির্যাতন নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে মহিলাদের মিছিলে রাজপথ কেঁপেছিল। আজ মিছিল শেষে পথসভায় বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর আহ্বান জানিয়েছেন। আজ আগরতলা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন প্রাঙ্গন থেকে মিছিল শুরু হয়। দীর্ঘ পথ পরিক্রমা করে রবীন্দ্র ভবনের সামনে এসেই মিছিলের সমাপ্তি হয়। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানবিক আবেদন রেখে প্লেকার্ড গলায় ঝুলিয়ে মানুষ মিছিলে হেঁটেছেন। এদিন সকাল থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মিছিলের সফলতা নিয়ে আয়োজকরা সংশয়ে ছিলেন। কিন্তু বেলা যত গড়িয়েছে আকাশ ততই পরিষ্কার হয়েছে। এই মিছিলে নারী নির্যাতন বন্ধে সমাজের কাছে বার্তা পৌছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ট্যাবলো সাজিয়ে বের করা হয়েছিল। পাশাপাশি, কয়েকজন তরুণ শিল্পীর ওই মিছিলে গান গেয়ে সমাজকে জাগ্রত করার প্রয়াস দেখা গেছে। এদিন ওই মিছিলকে ঘিরে আগরতলায় রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গনে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর সাথে পুলিশ ও টিএসআর মোতায়েন করা হয়েছিল। এছাড়া পুলিশ প্রশাসনের তরফে দুইটি জল কামানও রাখা হয়েছিল। অবশ্য, মিছিলকে ঘিরে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী হয়নি আগরতলা। সুশৃঙ্খলভাবেই ওই কর্মসূচি সমাপ্ত হয়েছে। মিছিল শেষে রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গনে অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক আশিষ সাহা বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অনেকেই আজ আসতে পারেননি। তবে, তাঁদের সমর্থন আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি আজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই অরাজনৈতিক কর্মসূচিকে বাধা দেওয়া হয়েছে। প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে। তবুও, মানুষ আজ অরাজনৈতিক মঞ্চের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তাঁর কথায়, একজন মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট হতে দেব না, নারীদের নিরাপত্তায় মানুষ এগিয়ে এসে আজ সংকল্প নিতে চেয়েছেন। তাঁর দাবি, আগরতলা শহর আজ মানবশৃঙ্খল-এ পরিণত হয়েছে। মা-বোনদের নিরাপত্তায় আজ সকলে হাতে হাত মিলিয়েছে। তাঁর বিশ্বাস, সকলের প্রচেষ্টায় ত্রিপুরায় নারীদের জন্য নিরাপদ ভূমি তৈরি হবে। এদিন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন বলেন, ঘর থেকেই উদার মানসিকতার সূচনা হতে হবে। তবেই নব প্রজন্মকে সঠিকভাবে গঠন করা সম্ভব হবে। তাঁর কথায়, সমাজের প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো জরুরি তাই মিছিল বের করেছি। কোন রাজনৈতিক স্বার্থে নয়, সমাজকে জাগ্রত করতেই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে লড়াই করতে হবে। তবেই অপরাধ কমবে, বাড়বে সাজার হার। তিনি আজ আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, নারীদের প্রতি অত্যাচারের কাহিনী শুনে বুকে যন্ত্রনা অনুভব করি। মেয়ের বাবা হিসেবে সেই যন্ত্রনা সহ্য করা কঠিন। তাঁর কথায়, দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো খুবই জরুরি। কাউকে দোষারোপ করে নয়, নিজেকে বদলে সমাজকে সুন্দর করে তুলতে হবে। তাঁর বক্তব্য, কোন সরকার নারীদের প্রতি নির্যাতন হোক, তা কামনা করে না। তাই, এই বিষয় নিয়ে রাজনীতিকরণ কাম্য নয়। তাঁর কথায়, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন ভাবে চিন্তা শুরু করেছি। তাই, শুধু নিজের দৃষ্টিভঙ্গি নয়, অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টাতে চাইছি। এদিন তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, আজকের কর্মসূচিকে রাজনৈতিক ভেবে যারা আমাকে ভুল বুঝেছেন, তাঁদেরও দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে এই আশা করি। তাই, আজ যাঁরা বাঁধা দিয়েছেন, আগামীদিনে তাঁরাও এগিয়ে আসবেন, এই প্রত্যাশা করছি। তাঁর আবেদন, সমাজকে নতুনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করি। তবেই, মা-বোনদের মুখে আমরা হাসি ফুটাতে সক্ষম হব। তাঁর সাফ কথা, কোন শক্তি প্রদর্শনের জন্য এই কর্মসূচি নেওয়া হয় নি। কারণ, আজ যাঁরা এখানে উপস্থিত আছেন, সকলেই বিবেকের তাড়নায় এবং অন্তরের ডাকে এসেছেন। তাঁর আরও আবেদন, যাঁরা আমাকে ভুল বুঝেছেন, তাঁদের হয়ত আমি বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। তাই, আপনাদের চিন্তাধারা বদলাবে এই আশা রয়েছি। সাথে আপনাদের সান্নিধ্য পাব সেই কামনা করছি।