‘আত্মনির্ভর ভারতের সূচনা কবিগুরুর কাছ থেকেই’, বললেন মোদি

অনলাইন ডেস্ক, ২৪ ডিসেম্বর।। ‘হে বিধাতা, দাও দাও মোদের গৌরব দাও, দুঃসাধ্যের নিমন্ত্রণে, দুঃসহ দুঃখের গর্বে’ – রবীন্দ্রনাথের এই বাণী দিয়েই বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উদযাপন মঞ্চে বক্তব্য শুরু করলেন নরেন্দ্র মোদি। বিশ্বভারতীর স্তুতি আচার্যের মুখে শোনা গেল। বললেন, “বিশ্বভারতীর দেখানো পথে, প্রকৃতির থেকে শিক্ষা নিয়েই আজ ভারত বিশ্বমঞ্চে নিজেকে তুলে ধরতে চাইছে।“  এ দিন ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “গুরুদেবের চিন্তাদর্শন, স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে দেশকে প্রেরণা দেওয়ার জায়গা বিশ্বভারতী।

বহু প্রথিতযশা বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিক, শিল্পী প্রসব করেছে বিশ্বভারতী।“ অন্যদিকে করোনার কারণে এই বছরে পৌষমেলা না হওয়া নিয়ে আক্ষেপ করেন মোদি বলেন, “এই নিয়ে ১০০ বছরে তৃতীয় বার এই মেলা হল না, ছোট শিল্পীরা, কারিগররা বিপদে পড়লেন। আমি চাইব, এই কারিগরদের বিষয়ে ছাত্রছাত্রীরা নজর দিন, তাঁদের প্রস্তুত করা হাতের কাজ কী ভাবে বিশ্ববাজারে তুলে ধরা যায় তার পথ তৈরি করুন।এমন ভাবেই দেশ আত্মনির্ভর হয়। মোদির কথায়, লক্ষ্যে পৌঁছতে গুরুদেবের দেখানো পথেই একলা চলতে হবে।” এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর দাবি, বিশ্বভারতীর শিক্ষাদর্শেই আজ হাঁটতে চাইছে দেশ। তাঁর কথায়, “শান্তিনিকেতন হোক বা শ্রীনিকেতন গুরুদেবের স্বপ্ন এগিয়ে নিয়ে চলেছে শতবর্ষ ধরে।

গুরুদেবের গ্রামোদয়ের আজ গোটা বিশ্বে চর্চিক। এখানে যে যোগ প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে শিক্ষার চিন্তা বিশ্বভারতীতেই প্রথম দেখা গিয়েছে। সেই বার্তাই বিশ্বকে আজ পৌঁথে দিচ্ছে আমাদের দেশ। গোটা বিশ্বে একমাত্র দেশ ভারত যাঁরা প্যারিস চুক্তি মেনে কার্বন নিঃসারণ মাত্রা কমাতে পারছে।” মোদির মতে, ভারতের স্বাতন্ত্র্য ও বিশ্বভারতী যেন একে অপরের পরিপূরক। তিনি ইতিহাসের পথ ধরে আসতে আসতে বলেন, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন বহু অতীতের আন্দোলন অনুপ্রেরণা থেকে পেয়েছিল। বিশেষ করে ভক্তি আন্দোলনের কথা বলতেই হয়। নাম আসবে মাধবাচার্য, রামানুচার্যের কথা। আসবে মীরাবাই, তুকারামের কথা। অন্য দিকে সন্ত কবীর, সুরদাস, গুরুনানক, বলতেই হয় চৈতন্যের কথা।

তাদের এই আন্দোলন ভারতকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল। এই সাধনমার্গ থেকে জ্ঞানমার্গে হেঁটেছে ভারত বিশ্বভারতীর মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হাত ধরেই। মোদি এদিন বাংলার রেনেসাঁ থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করেন।  আচার্যের মুখে আসে কালীভক্ত রামকৃষ্ণ পরমহংস ও তাঁর শিষ্য বিবেকানন্দর কথাও। এল ক্ষুধিরাম বসু, প্রীতিলতা ওয়েদ্দেদার, বীণা দাসদের কথাও। তাঁর কথায় ভারতের আত্মনির্ভরতার অভিযানের প্রেরণা বাংলার এই মনীষাই। তিনি বলছিলেন কী ভাবে বিশ্বভারতী, বেনারস হিন্দু বিশ্বাবিদ্যালয়, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, গুজরাত বিদ্য়াপীঠ, আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলি একই কালখণ্ডে গড়ে উঠে, ভারতের স্বাধীনতার স্বপ্নকে আরও এগিয়ে দিয়েছে। তাঁর কথায় ভক্তি আন্দোলন থেকে এ যেন জ্ঞান আন্দোলনের দিকে যাত্রা।

পাশাপাশি মোদি মনে করিয়ে দিলেন, রবীন্দ্রনাথ একই সঙ্গে বিশ্ববন্ধুত্ব এবং দেশের ঐতিহ্যকে মেলাতে চেয়েছিলেন। এই ধারাই ভারতকে বিশ্বকে অন্য দেশের থেক আলাদা করেছে। এই কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিশ্বভারতী। আসলে মানবকল্যাণের বৃহৎ লক্ষ্য নিয়ে চলছিলেন। তাঁর কথায়, “আমাদের আত্মনির্ভর ভারত অভিযানও এই মার্গেই চলেছে। এই অভিযান ভারতের সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে, শুধু আমাদেরই নয় গোটা বিশ্বের বিকাশের কথা বলছি আমরা।” এদিন বক্তব্যের শেষে তিনি গুজরাটের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নিবিড় যোগের কথা লিখলেন। বললেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুজরাট যোগের কথা। এল ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ লেখাটিরও কথা। রবীন্দ্রনাথকে পাথেয় করে আগামীদিনে বিশ্বভারতীর থেকে শিক্ষা নিয়েই চলবে দেশ, এই কথা স্মরণ করিয়েই সমাপ্তি হল আচার্যের অনুষ্ঠান পর্বের।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?