দেশ ও রাজ্যের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির অন্যতম ক্ষেত্র হচ্ছে পর্যটন শিল্প : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ২৭ সেপ্টেম্বর।। দেশ ও রাজ্যের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির অন্যতম ক্ষেত্র হচ্ছে পর্যটন শিল্প। রাজ্য সরকার পর্যটনের বিকাশে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। ফলে রাজ্যে দেশ-বিদেশের পর্যটকের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইউনাইটেড ন্যাশনস ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন ১৯৮০ সাল থেকে সারা দেশে ২৭ সেপ্টেম্বর দিনটি বিশ্ব পর্যটন দিবস হিসাবে পালনের সূচনা করে। তারপর থেকে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্ধারিত ভাবনার উপর ভিত্তি করে ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হচ্ছে। ২০২৪ সালের পর্যটন দিবসের মূল ভাবনা হল ‘পর্যটন এবং শান্তি’। এই বৎসর বিশ্ব পর্যটন দিবসের আয়োজক দেশ জর্জিয়া। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটনের অন্যতম সম্পদ। এছাড়াও রয়েছে ধর্মীয় পর্যটনের বিভিন্ন মন্দির ও মসজিদ। ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির, কসবা কালিবাড়ি, চতুর্দশ দেবতা বাড়ি, অমরপুরের মঙ্গলচন্ডী মন্দির, মহামুনী প্যাগোডা ইত্যাদি রাজ্যের উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় পর্যটনকেন্দ্র।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বলেন, রাজ্যের পর্যটন শিল্পের বিকাশে উদয়পুরের মাতাবাড়িকে নবকলেবরে সাজানোর উদ্যোগ চলছে। নারকেলকুঞ্জ এবং ডম্বুরকে ইতিমধ্যেই পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় করা হয়েছে। সেখানে লগ হাট চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। পর্যটন কর্মসংস্থানের অন্যতম বৃহৎ মাধ্যম এবং সমাজের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও দারিদ্র বিমোচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ৪১টি আধুনিক লগ হাট নির্মাণ ও চালু করা হয়েছে। উজ্জয়ন্ত প্রাসাদে লাইট এন্ড সাউন্ড শো চালু করা হয়েছে। নারকেল কুঞ্জে হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়েছে। ডম্বুর জলাশয়ে ওয়াটার স্কুটার/জেট স্কী, ভাসমান জেটি, আধুনিক মোটর চালিত বোট চালু করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বদেশ দর্শন-১০ প্রকল্পের মাধ্যমে আগরতলা, সিপাহীজলা, মেলাঘর, উদয়পুর, অমরপুর, মন্দিরঘাট, তীর্থমুখ, নারকেলকুঞ্জ, ডম্বুর, আমবাসা, নীরমহল এবং বড়মুড়া ইত্যাদি পর্যটন কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরকে একটি আধ্যাত্বিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রক কর্তৃক ‘প্রসাদ’ প্রকল্পের মাধ্যমে মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির চত্ত্বরের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কমলপুর মহকুমায় সুরমাছড়া ওয়াটার ফলস পর্যটন কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। রাজ্যের পর্যটন পরিকাঠামো বিকাশের লক্ষ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ছবিমুড়া, কৈলাসহরের সোনামুখী এলাকা, চতুর্দশ দেবতা মন্দির এবং কসবা কালি মন্দির চত্ত্বরের পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছবিমুড়া এবং কৈলাসহরে সোনামুখী এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে। এই পর্যটনকেন্দ্রগুলির উন্নয়নের জন্য প্রায় ১৮০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুষ্পবন্ত প্রাসাদ ও দরবার হল কে মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মানিক্য মিউজিয়াম ও কালচারাল সেন্টারে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। ডম্বুর জলাশয়ের জন্য অত্যাধুনিক হাউস বোট ক্রয় করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে আরও আকর্ষনীয় করে তুলতে হোম স্টে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের আওতায় উত্তর পূর্বাঞ্চল বিশেষ পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে নারকেলকুঞ্জের আশেপাশে আরও ৪টি আইল্যান্ড কে পর্যটকদের জন্য সাজিয়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উদয়পুর রেল স্টেশন থেকে মাতাবাড়ি, মহারাণী থেকে ছবিমুড়া, সুরমাছড়া এবং জম্পুই হিলে রোপওয়ে নির্মাণের জন্য ত্রিপুরা পর্যটন উন্নয়ন নিগম লিমিটেড ও ন্যাশনাল হাইওয়েজ লজিস্টিক ম্যানেজমেন্টস লিমিটেডের মধ্যে মৌ স্বক্ষরিত হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৬৯২ কোটি টাকা।

অনুষ্ঠানে পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, পর্যটনের মাধ্যমে অচেনাকে চেনা ও অজানাকে জানা সম্ভব হয়। পাশাপাশি পর্যটনকে কেন্দ্র করে রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় রাজ্য সরকার রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্রকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটনস্থল যেমন, নারিকেলকুঞ্জ, ছবিমুড়া, মাতাবাড়ি ও ঊনকোটিকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষনীয় করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজ্যের পর্যটনকে বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে তোলে ধরার লক্ষ্যে দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলীকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়েছে। পর্যটনমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পাশে দাঁড়িয়েছে পর্যটন দপ্তর। রাজ্যের পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর সৌরভ গাঙ্গুলীও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাহায্যার্থে ১০ লক্ষ টাকা দান করেছেন। এই অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে এছাড়াও ভাষণ রাখেন পর্যটন দপ্তরের সচিব ড. টি কে দেবনাথ ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রশান্ত বাদল নেগী। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তপশিলি জাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী শুধাংশু দাস, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার প্রমুখ। বিশ্ব পর্যটন দিবস অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক বন্যায় যে সব বীরগণ মানুষের জীবন রক্ষায় অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন সেই সব বীরদের সম্মান জানানো হয়। সম্মাননাস্বরূপ তাদের হাতে স্মারক, সংশাপত্র ও আর্থিক পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে এবছরের সেরা ট্যুর অপারেটর, ট্যুরিস্ট লজের সেরা ম্যানেজার, সেরা গাড়ি চালক, সেরা অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব সহ দপ্তরের ভালো কাজের সাফল্য স্বরূপ সেরা কর্মচারিদের পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়াও বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার স্বরূপ তাদের হাতে স্মারক উপহার ও সংশাপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?