এমজিএন রেগায় চলতি অর্থবছরে রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৩.৬১ কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টি করা হয়েছে : সচিব

আগরতলা, ১৩ মার্চ।। এমজিএন রেগায় চলতি অর্থবছরে রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৩.৬১ কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টি করা হয়েছে। গড়ে ৬১.৫ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে। গড় শ্রমদিবস সৃষ্টির নিরীখে ত্রিপুরা এখন পর্যন্ত সারাদেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের সাফল্য ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব ড. সন্দীপ আর রাঠোর এই তথ্য জানান। তিনি জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এমজিএন রেগায় কেন্দ্রীয় সরকার এখন পর্যন্ত ১০৬৫.৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে এবং রাজ্য সরকার ৭৫.১২ কোটি টাকা প্রদান করেছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ১০২১.৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সচিব জানান, কেন্দ্রীয় সরকার আগামী অর্থবছরে রাজ্যের জন্য ৩ কোটি শ্রমদিবসের লেবার বাজেট অনুমোদন করেছে।

সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) এখন পর্যন্ত রাজ্যের জন্য ৩.৭৭ লক্ষ পাকা ঘরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রাজ্য সরকারে বিশেষ উদ্যোগের ফলে ২০২২ সাল থেকে ১.৭০ লক্ষ যোগ্য পরিবারকে পাকা ঘরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সাল থেকে দৈনিক গড়ে প্রায় ৫০০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে এবং এই প্রকল্পে ২.৯১ লক্ষ ঘর তৈরী হয়েছে। এই সাফল্যের জন্য রাজ্য সরকারকে ভূয়সী প্রশংসা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) রাজ্য সরকার ব্যয় করেছে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের প্রায় ৬৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে গত আর্থিক বছর থেকে।

সাংবাদিক সম্মেলনে সচিব ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের সাফল্যগুলি তুলে ধরে জানান, ১ মার্চ, ২০২৪ এ ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের অধীনে থাকা কিল্লা মহিলা ক্লাস্টার লেভেল ফেডারেশন রিসার জন্য জি আই রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে। রাজ্যে প্রথমবারের মতো ভারত সরকারের গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রালয়ের ২৪তম সেন্ট্রাল লেভেল কো-আর্ডিনেশন কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি জানান, রাজ্যে টিআরইউপিটিআই নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এবছর এই প্রকল্পটি আমবাসা, দশদা এবং গঙ্গানগর ব্লকে চালু করা হয়েছে। ৪ হাজার অতি দরিদ্র পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। এরজন্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্টের উদ্দেশ্যে স্টার্ট-আপ ভিলেজ এন্টারপ্রেনারশিপ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ভারত সরকারে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রণালয় রাজ্যের ২টি ব্লক সাতচাঁদ এবং মাতাবাড়ি ব্লককে চিহ্নিত করেছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের অধীনে ৫ হাজার ৮৪৩টি মহিলা স্ব-সহায়ক দল গঠন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৮১ হাজার ৩৩১টি গ্রামীণ পরিবারকে যুক্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের আওতায় মোট ৪,৬৮,২৫৬টি দরিদ্র গ্রামীণ পরিবারকে ৫১,৫৫৫টি মহিলা স্ব-সহায়ক দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন ২৬.১১ কোটি টাকা রিভলভিং ফান্ড হিসেবে, ১৮২.২৭ কোটি টাকা কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড হিসেবে স্ব-সহায়ক দলের মধ্যে প্রদান করেছে।

গ্রামীণ সংগঠনগুলিকে ৯.০৩ কোটি টাকা ভালনারেবিলিটি রিডাকশন ফান্ড হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। স্ব-সহায়ক দলের সদস্যদের জীবিকার কার্যক্রমকে উন্নত করার জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৪০৩.৯৩ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। এরফলে এখন পর্যন্ত প্রদত্ত ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ হয়েছে ১১২৭.৪১ কোটি টাকা। স্ব-সহায়ক দলগুলির সুবিধার্থে এখন পর্যন্ত ৬০০টি কাস্টম হায়ারিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১২১টি কাস্টম হায়ারিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার তথ্য তুলে ধরে সচিব জানান, সাম্প্রতিককালে ৪টি সার্কেল, ৬টি ডিভিশন এবং ১৯টি সাব-ডিভিশন অফিস নতুনভাবে চালু করা হয়েছে। গ্রামোন্নয়ন দপ্তর ই-সঞ্চালন নামে একটি ওয়েব পোর্টাল তৈরী করেছে, যা শীঘ্রই চালু করা হবে। সচিব গ্রামোন্নয়ন (পঞ্চায়েত) দপ্তরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক তথ্য তুলে ধরে জানান, দপ্তর গ্রাম অন্বেষন নামে একটি উদ্ভাবনী প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পে প্রায় ১২০০ জন জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মচারি অংশগ্রহণ করেছেন।

তিনি জানান, ত্রিপুরা হলো দেশের অন্যতম রাজ্য যেখানে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত, ভিলেজ কমিটি, পঞ্চায়েত সমিতি, ব্লক উপদেষ্টা কমিটি এবং জেলা পরিষদগুলি গ্রামীণ এলাকার জনগণ থেকে ট্যাক্স ও নন ট্যাক্স রেভেনিউ ইউপিআই-এর মাধ্যমে সংগ্রহ করেছে।

তিনি জানান, রাজ্যের পঞ্চায়েতী রাজ ব্যবস্থা গ্রামোন্নয়নে বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে অবহিত হতে আসাম এবং মহারাষ্ট্র থেকে জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মচারিদের দুটি প্রতিনিধিদল ত্রিপুরায় এসেছিল। সচিব জানান, আমার সরকার পোর্টাল চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত পোর্টালে মোট ৫০,৩৫১টি সমস্যা উঠে আসে। এরমধ্যে ৪০,৯৪২টি সমস্যা সমাধান করা হয়।

সচিব জানান, পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স কর্মসূচিতে রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কমিটিগুলি গ্রামোন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানীয়জল, শিশু এবং মহিলাদের সামাজিক অবস্থানের বিষয়ে তাদের নিজেদের অবস্থান সংশ্লিষ্ট পোর্টালে আপলোড করবে। এই কর্মসূচির প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কমিটিগুলি কোন জায়গায় অবস্থান করছে তার সামগ্রিকচিত্র পাওয়া যাবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরা গ্রামীন জিবিকা মিশনের অতিরিক্ত সিইও অজিত শুরুদাস, পঞ্চায়েত দপ্তরের অধিকর্তা প্রসূন দে এবং গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের চীফ ইঞ্জিনিয়ার সাগর সোভন দেবনাথ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?