বন্য হাতির তান্ডব থেকে মুক্তির দাবীতে চাকমাঘাটে জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন এলাকাবাসী

তেলিয়ামুড়া, ১৯ জানুয়ারি।। বন্য হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষোভের মুখে মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা। মন্ত্রী বিকাশবাবুর নির্বাচনী কেন্দ্রে বন্য হাতির তান্ডব থেকে পরিত্রােনর দাবীতে সরব হয়ে আসাম আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন গ্রামবাসীরা। ঘটনা ২৯ কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চাকমাঘাটস্থিত মহকুমা শাসক কার্যালয় সংলগ্ন জাতীয় সড়কে। শুক্রবার পথ অবরোধে আটকে পড়ে উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী তথা ২৯ কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক বিকাশ দেববর্মা।

উল্লেখ্য প্রায় দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়া মহকুমার ২৯ কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন জনবসতি এলাকাগুলির মানুষজন রাতে কিংবা দিনের বেলায় নিজ নিজ পরিবারের লোকজনদের নিয়ে আতঙ্কে দিন গুজরান করতে হচ্ছে। কারণ শুধু একটায় বন্য হাতির তান্ডব। এক সময়ের আঠারোমুড়ার বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল জুড়ে ছিল ছোট বড় সবুজ গাছ গাছালিতে ঢাকা। বন্য প্রাণীদের খাদ্যের অভাব ছিল না। বন্য প্রাণীরা বনের মধ্যে যে খাদ্য ছিল সেই খাদ্যের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকত। কিন্তু, কয়েক বছর ধরে বনদস্যুরা বনের ছোট বড় গাছ পালা কেঁটে উজার করে ফাঁকা করে দিয়েছে বন। যার ফলে বিশেষ করে বন্য হাতির দল খাদ্যের অভাব পূরণ করার তাগিদে লোকালয়ে চলে এসেছে। বনাঞ্চল থেকে এসে প্রতিদিন তান্ডব চালাচ্ছে লোকালয়ে। তান্ডব চালাচ্ছে মানুষের বাড়িঘরে ও জমিতে ফলানো ফসলে। আর তাতে করে সর্বস্বান্ত হচ্ছে গৃহস্থরা। এমন অনেক পরিবার রয়েছে যারা বণ্য হাতির আক্রমণে যাদের পরিবারের সদস্যদের অকালে হারাতে হয়েছে।

এদিকে বছরের পর বছর ধরে বন্য হাতির তান্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেককে পালিয়ে আসতে হয়েছে অন্যত্র। নির্বিকার তেলিয়ামুড়া বনদপ্তরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। শীতের মরসুম শুরু হতেই বন্য হাতিগুলি খাদ্যের সন্ধানে তান্ডব চালায় সমতল ভূমিতে বসবাসরত গ্রামবাসীদের বাড়িঘর এবং ফসলের জমিতে। তেলিয়ামুড়া মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকাগুলি যেমন ২৯ কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের চাকমাঘাটের বিভিন্ন এলাকা, চামপ্লাই, কৃষ্ণপুর, ভূমিহীন কলোনী, বড়লুঙ্গা, দাওছড়া, ওয়াক্সিমাইল, মহারানীপুর, ডিএম কলোনি, কপালীবস্তি, উত্তর মহারানী সহ বিভিন্ন এলাকায় বিচরণ করছে বন্য হাতির দল। বিগত দিনগুলিতে হাতির তান্ডব থেকে এলাকাগুলিকে রক্ষা করার জন্য বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও কাজের কাজ সরকারি অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রত্যেকদিন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলে রাতে বন্যহাতির পাল হানা দেয় কোন না কোন এলাকাতে। ঘন্টার পর ঘন্টা তান্ডবে শতাধিক ফলজ বাগানের কলা, আম, নারিকেল, সুপারি, কাঠাল গাছ সহ মানুষের বাড়ি ঘরে বিরামহীন তান্ডব চালিয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে।

হাতির তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে বন দপ্তর। তাই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি শুক্রবার সকালে হাতির তান্ডব থেকে রক্ষা পেতে এবং ক্ষতিপূরণের দাবীতে অসম আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে তেলিয়ামুড়া থানার পুলিশ এবং তেলিয়ামুড়া মহকুমা শাসক অভিজিৎ চক্রবর্তী। দীর্ঘ প্রায় দেড় ঘন্টা চলে পথ অবরোধ। এই অবরোধ স্থলে আটকে পরে উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী তথা এই কেন্দ্রের বিধায়ক বিকাশ দেববর্মা। অবিলম্বে হাতির তান্ডব থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশ্বাস পেয়ে পথ অবরোধ তুলে নেয় এলাকাবাসী। এই অবরোধের ফলে জাতীয় সড়কের দু’পাশে শতশত যানবাহন আটকে পড়ে।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?