আগরতলা, ১৯ জানুয়ারি।। সড়ক দুঘটনা রোধে এবং দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে রাজ্য সরকার বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে কাজ করছে। পাশাপাশি সড়ক সুরক্ষা ও দুর্ঘটনা রোধে জনগণকে আরও বেশি করে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ উপযুক্ত সচেতনতা থাকলে এবং ট্রাফিক আইন মেনে চললে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। আজ সচিবালয়ের ২ নং সভাকক্ষে স্টেট রোড সেফটি কাউন্সিলের সভায় পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এ কথা বলেন।
সভায় স্টেট রোড সেফটি কাউন্সিলের সর্বশেষ সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন দপ্তর যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা পর্যালোচনা করে পরিবহন মন্ত্রী বলেন, সড়ক সুরক্ষার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্রফিক দপ্তর ও পরিবহন দপ্তরকে সমন্বয় রেখে কাজ করা আবশ্যক। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবীদেরও ট্রাফিক মিত্র হিসাবে যুক্ত করে সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে সামিল করা প্রয়োজন। আগরতলা শহর বা আশপাশ এলাকায় ই-রিক্সাগুলির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবহন দপ্তরকে ট্রাফিক দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন পরিবহণমন্ত্রী।
সভায় পরিবহণ মন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্য সরকার সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। ইতিমধ্যেই আইন ভঙ্গকারী যানবাহনগুলির সনাক্তকরণ এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিবহণ দপ্তর ও আরক্ষা দপ্তর আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে।
সভায় পরিবহণ দপ্তরের কমিশনার সুব্রত চৌধুরী জানান, রাজ্যের প্রতিটি জেলাতেই সড়ক সুরক্ষা কমিটি রয়েছে। সড়ক সুরক্ষা ও দুর্ঘটনা রোধে এই কমিটিগুলো ২০২৩ সালে মোট ২০টি সভার আয়োজন করেছিল। সেই সভাগুলোর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে সেখানে বেসিক লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স প্রদানের বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দপ্তরেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়।
কমিশনার সুব্রত চৌধুরী জানান, গত ১৫ জানুয়ারি থেকে রাজ্যব্যাপী ‘জাতীয় সড়ক সুরক্ষা মাস’ পালন শুরু হয়েছে। যা আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ পর্যন্ত চলবে। এই উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সড়ক, পরিবহন ও হাইওয়ে মন্ত্রকের গাইডলাইন অনুসারে মাস ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। এরমধ্যে রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় স্বেচ্ছাসেবকদের চিহ্নিত করে তাদের সড়ক সুরক্ষা ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং তাদের মাধ্যমে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বাজার এলাকা সহ জেলার বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় সড়ক সুরক্ষার উপর সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান সংঘটিত করা হবে। পাশাপাশি বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রছাত্রীদের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শপথবাক্য, কর্মশালা এবং সচেনতামূলক নাটকের আয়োজনও করা হবে।
তিনি জানান, জাতীয় সড়ক সুরক্ষা মাস পালন হিসাবে রাজ্যের বিভিন্ন মোটরস্ট্যান্ড, ট্রাক টার্মিনালে স্বাস্থ্য দপ্তরের উদ্যোগে চুক্ষ পরীক্ষা সহ স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করা হবে। ট্রাফিক আইন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের এল ই ডি বোর্ডগুলিতে এক মাস ব্যাপী প্রদর্শন করা হবে। এছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সড়ক সুরক্ষা ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেগা ক্যুইজ ইভেন্টের আয়োজন করা হবে।
সম্প্রতি দূর্ঘটনাজনিত আহত দুইজন ব্যক্তিকে নিজ উদ্যোগে সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে প্রাণরক্ষা করার মহৎ কাজের জন্য দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বাইখোড়ার অজয় রায়কে সভায় গুড সামারিটন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী পুরস্কারস্বরূপ তার হাতে পাঁচ হাজার টাকার চেক এবং শংসাপত্র তুলে দেন। স্টেট রোড সেফটি কাউন্সিলের সভায় পরিবহনমন্ত্রী ছাড়াও তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের প্রধান সচিব পুনীত আগরওয়াল, অর্থ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় সহ পূর্ত, স্বাস্থ্য, আরক্ষা ও শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভার শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, সড়ক সুরক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতি বছরই স্টেট রোড সেফটি কাউন্সিলের সভার আয়োজন করা হয়ে থাকে। সেই সভায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার সড়ক দুর্ঘটনা রোধ এবং দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্যে নিত্য নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে কাজ করে যাচ্ছে।
পরিবহন দপ্তরও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে স্বাস্থ্য দপ্তর, পূর্ত দপ্তর, আরক্ষা দপ্তরের সহযোগিতায় বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ন করছে। রাজ্যের বিভিন্ন সড়ক বিশেষ করে জাতীয় সড়কগুলিতে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আরও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়েও আজকের সভায় আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া যে, আগামী ৩১ জানুয়ারি আগরতলা সহ রাজ্যের প্রতিটি জেলায় সড়ক সুরক্ষা সপ্তাহ পালন করা হবে।