রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বন ও বনভিত্তিক সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৩ আগস্ট।। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আত্মনির্ভর ভারত গঠনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজ্য সরকার আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। আত্মনির্ভর রাজ্য গড়ে তুলতে শিল্প স্থাপনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গত কয়েক বছরে রাজ্যে আগর, বাঁশ এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র বনজ সম্পদ উৎপাদন ক্ষেত্রের উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। আজ হোটেল পোলো টাওয়ারে ফরেস্ট অ্যান্ড এগ্রো ফরেস্ট ভ্যালু চেইন ডেভেলপমেন্টের উপর চারদিনব্যাপী গোলটেবিল বৈঠকের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন।

শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর আয়োজিত এই গোলটেবিল বৈঠকে রাজ্য ও বহির্রাজ্যের শিল্প উদ্যোগীরা অংশগ্রহণ করেন। গোলটেবিল বৈঠকের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বন ও বনভিত্তিক সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের রাজ্য বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক ও বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ। রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আগর শিল্পের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে ত্রিপুরা আগর উড পলিসি চালু করা হয়। এই পলিসির মাধ্যমে রাজ্যে আগর উড সেক্টরের উন্নয়নে রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। আগর শিল্পের প্রসারে আগর গাছ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সরলীকরণ করা হয়েছে। এছাড়াও আগরজাত সামগ্রী রপ্তানির জন্য রাজ্যের কোটাও কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দিয়েছে। ফলে শিল্প উদ্যোগীরা নিঃসন্দেহে ত্রিপুরায় আগরভিত্তিক শিল্প স্থাপনে আসতে পারেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় রাজ্য হীরা উপহার পেয়েছে। ফলে রাজ্য বর্তমানে ইন্টারনেট, রেল, সড়ক ও আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় রাজ্য বর্তমানে দেশের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ ইন্টারনেট গেটওয়েতে পরিণত হয়েছে। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে বর্তমানে রাজ্য থেকে ১২টি এক্সপ্রেস ট্রেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করছে। আগরতলার মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দরটিরও উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরে পরিণত হয়েছে। এসবই সম্ভব হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের ডাবল ইঞ্জিন সরকারের প্রচেষ্টায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাঁশ রাজ্যের অন্যতম একটি সম্পদ। রাজ্যে বর্তমানে ২৯ প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে রাজ্যে বাঁশ ও বাঁশভিত্তিক শিল্প সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাঁশের বিভিন্ন প্রজাতির বনায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

রাজ্যে পরিবহণের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রানজিট পারমিট থেকে বাঁশকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আগরবাতি সেক্টরে দেশে ত্রিপুরার সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে বন দপ্তর ও ত্রিপুরা ব্যাম্বু মিশন নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাঁশের বর্জ্য কমিয়ে আনা এবং ব্যাম্বু ব্রিকেটস, অ্যাক্টিভেটেড চারকোল ইত্যাদি পণ্যের প্রসারেও সরকার গুরুত্ব দিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে পর্যটন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। পর্যটনের উন্নয়নে রাজ্য সরকার ইকো ট্যুরিজমের বিকাশে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সেই লক্ষ্যে সিপাহীজলা ও গোমতী অভয়ারণ্যে ইকো ট্যুরিজমের বিকাশে ত্রিপুরা ন্যাচার ট্রেইলস অ্যান্ড রিসোর্স লিমিটেড নামক একটি নতুন কোম্পানিকে নিযুক্ত করা হয়েছে। রাজ্য সরকার শিল্প স্থাপনে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা চালু করেছে সেগুলিকে ভিত্তি করে রাজ্যে শিল্প স্থাপনে শিল্প উদ্যোগীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন রাবার, বাশ, আগর ইত্যাদির মাধ্যমে রাজ্যে শিল্প স্থাপনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও রাজ্যের বিখ্যাত আনারস, কাঁঠালকে কেন্দ্র করে ফল। প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনেরও সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বহির্রাজ্যের বিনিয়োগকারীরা রাজ্যে শিল্প স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারও শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ গড়ে তোলার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের প্রধান সচিব কে এস শেঠি, বন দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্য প্রধান বন সংরক্ষক ভি জি জেনার, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি প্রমুখ।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?