স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১২ জুলাই।। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট রাজ্যের সকল জাতি, জনজাতি, তপশিলি জাতি, অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণী, সংখ্যালঘু, মহিলা, ছাত্র, যুব সকলের উন্নয়নের লক্ষ্যেই তৈরি করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নে সদিচ্ছার কোন অভাব নেই। ভবিষ্যৎ ত্রিপুরাকে এক মডেল রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলাই বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। আজ বিধানসভায় প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। আজ বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় সহ ১৬ জন বিধায়ক আলোচনা করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এবারের বাজেটে মূলধনী বিনিয়োগে পরিকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এরফলে রাজ্যে যেমন বিনিয়োগ বাড়বে তেমনি কর্মসংস্থানও হবে। কৃষি ও কৃষি সম্পর্কিত ক্ষেত্রের বিকাশেও বাজেটে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজনীতির বাইরে গিয়ে সর্বস্তরের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে এই সরকার সচেষ্ট।
বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনায় ছাত্রীদের স্কুটি দেওয়া হবে, মহিলা খেলোয়াড়দের সহায়তায় মুখ্যমন্ত্রী স্টেট ট্যালেন্ট সার্চ প্রোগ্রাম এবং মুখ্যমন্ত্রী স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট স্কিমে বিশ্বমানের ক্রীড়া পরিকাঠামো এবং খেলোয়াড়দের স্কলারশিপের সুবিধা, প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার বাইরের রাজ্যে ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার পরিবার মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা- ২০২৩ নামক নতুন প্রকল্পে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকার বীমার সুবিধা পাবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ, রাজ্যের ৮টি জেলায় নেশামুক্তি কেন্দ্র তৈরি করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী নগর উন্নয়ন প্রকল্পে রাজ্যের বিভিন্ন শহরের পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি নগর উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী স্যাটেলাইট টাউন ডেভেলপমেন্ট স্কিম নামে নতুন প্রকল্প নামে চালু করা হচ্ছে। রাজ্যে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮ সালের তুলনায় এবছর মোট প্রস্তাবিত বাজেট বেড়েছে ১৫,২১২ কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার প্রায় ১২২.২৭ শতাংশ। জন কল্যাণকারী দপ্তরগুলির বাজেট ২০১৭-১৮’র তুলনায় এবছর কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে যুব সমাজের দক্ষতা উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন শাসক এবং বিরোধী দলের সকল সদস্যরাই রাজ্যের জনগণের স্বার্থে এই জনমুখী বাজেটকে সদর্থক মনোভাব নিয়ে সমর্থন করবেন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বলেন, এই বাজেট ভবিষ্যৎমুখী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক। প্রস্তাবিত বাজেটে সমাজের প্রতিটি অংশের জনসাধারণের কথা চিন্তা করা হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করেও এই বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিনি মিশন প্রকল্পে আগামী দু’বছরে জনজাতি রাবার চাষিদের জন্য ২৭.৫০ কোটি টাকা বায় করে ৫০টি স্মোক হাউস নির্মাণ করা হবে। সরকারের প্রাথমিক অগ্রাধিকার হচ্ছে জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের সার্বিক বিকাশ।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ১,৪৩৫ কোটি টাকার ত্রিপুরা রুরাল ইকোনমিক গ্রোথ অ্যান্ড সার্ভিস ডেলিভারি প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। এই পুর প্রকল্পটিই ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদ এলাকায় বাস্তবায়ণ করা হবে। এই প্রকল্পের বাইরে যেসব জনজাতি অধ্যুষিত গ্রাম আছে সেসব গ্রামের উন্নয়নে প্রস্তাবিত বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী টাইবেল ডেভেলপমেন্ট মিশন শুরু করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এজন্য ৩০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দেরও সংস্থান রাখা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটের উপর আলোচনায় বিরোধী দলের কোনও সদস্য এব্যাপারে কিছুই বলেননি।
প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদ এলাকার উন্নয়নে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে স্পেশাল ফান্ড রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। জনজাতিদের উন্নয়নে বর্তমান সরকার ব্লু শরনার্থীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এই অর্থবছরে মৌলিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য ৩০ কোটি টাকা ব্যায়ে ১০০টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নির্মাণ করা হবে। তাছাড়াও ৫৫ কোটি টাকা বায়ে একটি পৃথক সংক্রামক ব্যাধি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প চালুর মধ্য দিয়ে যুগপোযোগী ও জব ওরিয়েন্টেড দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্পেশাল সেন্ট্রাল অ্যাসিস্টেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। শান্তিরবাজার-কুয়ামাড়া এবং দেবীপুর কুরমা হয়ে অমরপুরের রাস্তা উন্নয়নের জন্য ৩৮.৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প রূপায়িত হবে। তাছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পে স্পেশাল অ্যাসিস্টেন্সের মাধ্যমে সরকার ৭০৮ কোটি টাকা ব্যয় করবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেট প্রকৃতপক্ষে ত্রিপুরাকে একটি উন্নত রাজ্যে পরিণত করার এক অভিমুখ।
প্রস্তাবিত বাজেটকে সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক প্রমোদ রিয়াৎ, বিধায়ক বিনয় ভূষণ দাস, বিধায়ক অভিষেক দেবরায়, বিধায়ক সুশান্ত দেব, বিধায়ক স্বপ্না মজুমদার। এছাড়াও আলোচনা করেন বিধায়ক শ্যামল চক্রবর্তী, বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায়, বিধায়ক সঞ্জয় মানিক ত্রিপুরা, বিধায়ক দীপঙ্কর সেন, বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা, বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস, বিধায়ক পল দাংশু, বিধায়ক অশোক মিত্র, বিধায়ক চিত্তরঞ্জন দেববর্মা, বিধায়ক নয়ন সরকার।