রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে ব্যাংকগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, ব্যাঙ্কার্স কমিটির সভায় বললেন মুখ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৮ জুন।। রাজ্য সরকার যেসমস্ত ক্ষেত্রগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সে সম্পর্কে ব্যাংকগুলিকে অবগত হয়ে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে কাজ করতে হবে। তবেই এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়া সম্পব হবে। আজ সচিবালয়ের ২নং সভাকক্ষে ১৪৩তম স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। সভায় সর্বশেষ স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে যেসমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা কতটুকু অগ্রসর হয়েছে তার পর্যালোচনা করা হয়। সভায় আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকগুলিকে এনপিএ কমানোর পাশাপাশি সিডি রেশিও বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ক্ষুদ্র, মাঝারি, ছোট শিল্পক্ষেত্রে ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলির বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা (অ্যানুয়েল টার্গেট) ১০০ শতাংশ পূরণে আরও কার্যকরি ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে ব্যাংকগুলিকে। পাশাপাশি অটল পেনশন যোজনায় কভারেজের সংখ্যা বাড়াতে ব্যাংকগুলিকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা এবং স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া যোজনায় ঋণ গ্রহণ করে বেকার যুবক যুবতীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার বিরাট সুযোগ রয়েছে। তাই এই দুটি যোজনায় বেশি সংখ্যক ঋণ প্রদানের জন্য ব্যাংকগুলোকে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।

সভায় স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির কনভেনার বিকাশ দাস জানান, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের অ্যানুয়েল ক্রেডিট প্ল্যানে ব্যাংকগুলি প্রাইমারি ক্ষেত্র সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ ডিসবার্সমেন্টের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের মার্চ, ২০২৩ পর্যন্ত কৃষি, ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি শিল্প সহ অন্যান্য প্রাইমারি সেক্টরগুলির জন্য ৮৭০৭.৪৪ কোটি টাকা ব্যাংকগুলি ডিসবাস করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের মার্চ, ২০২৩ পর্যন্ত ৬০ হাজার ২৭১ জন কিষাণ ক্রেডিট কার্ড প্রাপ্ত কৃষককে মোট ৩৩০.৩৪ কোটি টাকা প্রদান করেছে ব্যাংকগুলি। এসএলবিসি’র কনভেনার আরও জানান, 20২২-২৩ অর্থবর্ষের মার্চ, ২০২৩ পর্যন্ত ৯১ জন এসসি ও এসটি মহিলা সুবিধাভোগীকে মোট ১১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনায় এপ্রিল, 2022 থেকে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৬০ জন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে ২৩৯২.৯১ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করেছে। তিনি জানান, সামাজিক সুরক্ষা স্কিম যেমন, প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনায় এখন পর্যন্ত ১০ লক্ষ ২২ হাজার ১৩০টি অ্যাকাউন্ট, প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বীমা যোজনায় ৩ লক্ষ ৬৪ হাজার ২১৪টি অ্যাকাউন্ট এবং অটল পেনশন যোজনায় ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৮০৭টি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি সামাজিক সুরক্ষা স্কিমে নতুন অ্যাকাউন্ট আরও বেশি পরিমাণে খোলার জন্য ব্যাংকগুলিকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

সভায় স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির কনভেনার জানান, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের মার্চ, ২০২৩ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ৪১৫ জন শিক্ষার্থীকে 202১.৭৪ লক্ষ টাকার শিক্ষা ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের মার্চ, ২০২৩ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ৬ ১৮৮টি গৃহ ঋণের জন্য ব্যাংকগুলি ৬৮১.৭১ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। এছাড়াও ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন দ্বারা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ১৮ হাজার ৮০০টি স্বসহায়ক দলের অ্যাকাউন্টের মধ্যে ১৮ হাজার ৯৪টি অ্যাকাউন্টের জন্য ২৮৯.৮৭ কোটি টাকা ব্যাংকগুলি মঞ্জুর করেছে। সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রমোদনগর, ধূমাছড়া, ফটিকরায়, করমছড়া ও গন্ডাছড়ায় ব্যাংকের নতুন শাখা খোলার জন্য ব্যাংকগুলিকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়াও উদয়পুরের গর্জনমুড়া এলাকার জনগণের দাবি অনুযায়ী সেখানে ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাংকের একটি শাখা খোলার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, রাজ্যের প্রতিটি জেলায় বিশেষ করে জেলা হাসপাতাল ও মহকুমা হাসপাতালগুলির পাশে এটিএম কাউন্টার স্থাপনের জন্য ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাংক, ত্রিপুরা কোঅপারেটিভ ব্যাংক সহ অন্যান্য ব্যাংকগুলিকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির ১৪৩তম সভায় মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের প্রধান সচিব বি এস মিশ্রা, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের প্রধান সচিব কে এস শেঠি, নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং, মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের ফিনান্স সেবা দপ্তরের অধিকর্তা ড. প্রশান্ত কুমার গোয়েল, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার সতবন্ত সিং মাহাতো, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার কনোয়ালজিং শৌরে, নাবার্ডের জেনারেল ম্যানেজার লোকেন দাস, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের জোনাল ম্যানেজার চিত্তরঞ্জন পুষ্টি সহ এসএলবিসি কমিটির আওতাভুক্ত বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?