স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা,২৯ নভেম্বর৷৷ ত্রিপুরার উন্নয়ন এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ শিক্ষাক্ষেত্র তার মধ্যে একটি৷ শিক্ষাই হচ্ছে একমাত্র মাধ্যম যার মাধ্যমে পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটানো যায়৷ আজ আগরতলার মহারাজা বীরবিক্রম কলেজের রবীন্দ্র হলে ’ত্রিপুরায় শিক্ষার উন্নয়নে নতুন দিগন্ত’ শীর্ষক এক আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় একথা বলেন৷
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপরাষ্ট্রপতির পত্নী ড. সুুদেশ ধনখড়, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা, শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ আলোচনাচক্রের উদ্বোধনের আগে উপরাষ্ট্রপতি রবীন্দ্র হলের একতলায় ’ত্রিপুরার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ শীর্ষক প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করেন৷ আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, ত্রিপুরায় এসে তার সবচেয়ে যে তিনটি বিষয় ভালো লেগেছে সেগুলি হলো, এখানকার মানুষের আন্তরিক অভ্যর্থনা, রাজ্যের উন্নয়নচিত্র ও ভগবান প্রদত্ত ত্রিপুরার প্রাক’তিক সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য৷ তিনি বলেন, এ রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রের এখন দ্রত উন্নতি হচ্ছে৷
জাতীয় পর্যায়েও ভারতের অগ্রগতি হচ্ছে এবং দেশের এই উন্নয়ন অপ্রতিরোধ্য৷ ভারত এখন আন্তর্জাতিক স্তরে ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতির স্থান পেয়েছে এবং এই দশক শেষ হতে হতে এই আর্থিক উন্নয়ন আরও অনেকটা এগিয়ে যাবে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী চিন্তাধারার প্রশংসা করে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, দীর্ঘ ৩৪ বছর পর প্রধানমন্ত্রী পুরনো শিক্ষানীতি বাতিল করে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করেছেন৷ উপরাষ্ট্রপতি জানান, তিনি নিজেও এই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকেও পরামর্শ নিয়েই এই নীতি তৈরি করা হয়েছে৷ এই শিক্ষানীতি সরকারের এক মাইলস্টোন সাফল্য বলে বর্ণনা করেন তিনি৷ এই নীতির ফলে সবাই যার যার মেধার বিকাশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সুুযোগ পাচ্ছে৷
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির কারণে এখন উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রভূত উন্নয়ন হচ্ছে৷ উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিকাশে পৃথক মন্ত্রক রয়েছে৷ উন্নয়নের শর্ত এবং সূচকও বদলেছে৷ এই উন্নয়নমূলক প্রক্রিয়ায় ত্রিপুরা নিজের জন্য এক আলাদা জায়গা করে নিয়েছে৷ এই উন্নয়নে শিক্ষার এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে৷ এক সময়ে উদ্ভাবনী ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো খুবই কঠিন ছিল৷ কিন্তু এখন সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে এই সুুযোগ তৈরি হয়েছে৷ নতুন নতুন স্টার্ট আপ তৈরি হচ্ছে৷ ২০২২ সালে ভারতের বহু কোম্পানি ইউনিকর্ন কোম্পানির মর্যাদা লাভ করেছে৷ ভারতে যে গতিতে উন্নতি হচ্ছে আর কোনও দেশে সেভাবে হচ্ছে না৷ কোভিডের সময়েও ভারতের মানবিক উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে৷
আলোচনাচক্রে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বের এমন কোনও শিল্প নেই যেখানে ভারতীয়রা নেই৷ তাই আমরা গর্বিত আমাদের সাফল্যকে নিয়ে৷ ত্রিপুরায়ও ক’ষিক্ষেত্রে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে৷ ত্রিপুরার প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহার নেত’ত্বে ত্রিপুরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে৷ তিনি বলেন, আমাদের দেশ এখন বহু ক্ষেত্রেই শীর্ষ স্থানে রয়েছে৷ এই প্রথম বিশ্বের দরবারে ভারতের বক্তব্যকে সবাই গুরুত্ব দিচ্ছে৷
জি-২০-এর বৈঠকেও ভারত পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেছে যে, যুদ্ধ কোনও সমস্যারই সমাধান নয়৷ এটাই ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রতীক৷ আমাদের বিদেশ নীতি শুধুমাত্র ভারতকেন্দ্রিক অর্থাৎ শুধুমাত্র দেশের স্বার্থেই পরিচালিত৷ উপরাষ্ট্রপতি দেশের নতুন ইকো-সিস্টেমে সবাইকে বিশেষ করে যুব সম্পদায়কে নতুন সুুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নতিতে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান৷ তিনি সংবিধানের মৌলিক দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে ছেলেমেয়েদের ভারতের সুুনাগরিক হওয়ার পরামর্শ দেন৷ তিনি ত্রিপুরাকে ভগবানের ভূমি তথা মা ত্রিপুরাসুুন্দরীর স্থান বলে অভিহিত করেন এবং মাতা ত্রিপুরাসুুন্দরীর আশীর্বাদ নিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন৷ তিনি ত্রিপুরা এবং দেশের উন্নতির জন্যও ত্রিপুরাসুুন্দরীর আশীর্বাদ কামনা করেন৷
আলোচনাচক্রে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা রাজ্যবাসীর পক্ষ থেকে উপরাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, যার কাছে নলেজ আছে সেই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ছাড়া কেউ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না৷ শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রেই নয় ত্রিপুরা সবক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে৷ এ বিষয়ে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে উন্নয়নমূলক কাজের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার ত্রিপুরার উন্নয়নে যৌথভাবে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করছে৷ জাতীয় সড়কের উন্নয়ন, নতুন জাতীয় সড়ক তৈরি করা, মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দরের উন্নয়ন, ইন্টারনেট পরিষেবার সঠিক ব্যবহার প্রভৃতির কথা তুলে ধরেন তিনি৷
তিনি বলেন, সাব্রুমে মৈত্রী সেতু ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে৷ এই সেতু চালু হলে ত্রিপুরা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বারে পরিণত হবে৷ রাজ্যে ডেন্টাল কলেজ চালু হয়ে যাবে৷ আমবাসায় আরেকটি মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করার জন্য ইতিমধ্যেই জায়গা চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ গতকাল আগরতলায় ত্রিপুরা ফিল্ম এবং টেলিভিশন ইনস্টিটিউট যাত্রা শুরু করেছে৷ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বর্তমান রাজ্য সরকারের সময়ে রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির কথা তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত গঠন করতে রাজ্যেও বিকাশের কাজ চলছে৷
বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রাজ্যে সিবিএসই পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে৷ শিক্ষার উন্নতিতে ভোকেশনাল ট্রেনিং, বছর বাঁচাও অভিযান, মার্ট ক্লাস, ডিজিটাল লাইবেরি, বন্দে ত্রিপুরা চ্যানেল চালু করা, নতুন দিশা, কম্পিউটার শিক্ষা চালু করার কথাও তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা পিজিআইতে গ্রেড ওয়ানে উঠে এসেছে৷ রাজ্যে আইন বিশ্ববিদ্যালয়, বুদ্ধিস্ট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হচ্ছে৷ ত্রিপুরা ধীরে ধীরে এডুকেশনাল হাব হয়ে উঠছে৷ রবীন্দ্র হলে আলোচনাচক্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ত্রিপুরায় শিক্ষা ব্যবস্থার অগ্রগতি বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়৷ আলোচনাচক্রে সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এমবিবি কলেজের অধ্যক্ষ ড. নির্মল ভদ্র৷
উল্লেখ্য, আজ একদিনের রাজ্য সফরকালে স’ক উপরাষ্ট্রপতিকে আগরতলার এমবিবি বিমানবন্দরে স্বাগত জানান রাজ্যপাল সত্যদেও নারাইন আর্য, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা, উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ৷ সকাল ১০টা নাগাদ বায়ুসেনার এক বিশেষ বিমানে আগরতলায় এসে তিনি বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্ঢারে সরাসরি উদয়পুর চলে যান ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির দর্শনে৷ বিকেল ৩টা নাগাদ তিনি বিমানে রাজ্য ত্যাগ করেন৷ বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল সত্যদেও নারাইন আর্য, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা ও মুখ্যসচিব জে কে সিনহা৷
