রিপাবলিকান দলকে বাড়তি অক্সিজেন যোগাচ্ছিল প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লাগাতার প্রচারসভা

অনলাইন ডেস্ক, ১০ নভেম্বর।। আর্থিক মন্দায় জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্বর্তী নির্বাচনে এবার রিপাবলিকানদের লাল ঝাণ্ডার ঝড় উঠবে বলে ইঙ্গিত মিলছিল অনেক জনমত জরেপেই। রিপাবলিকান দলকে বাড়তি অক্সিজেন যোগাচ্ছিল প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লাগাতার প্রচারসভা। কিন্তু বুধবার ফল প্রকাশিত হতে শুরু করার পরে দেখা যাচ্ছে, লড়াই চলছে সমানে সমানে।

নির্বাচনের যে ফলাফল এখন পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। সিনেটে জয়ের জন্য প্রয়োজন মোট ৫১টি আসন। সবশেষ ফলাফলে দেখা গেছে ডেমোক্রেটিক পার্টির জিতেছে ৪৮টি আসন ও রিপাবলিকান পার্টি পেয়েছে ৪৯টি আসন। অর্থাৎ আর দুটি আসনে জয় পেলে সিনেট রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টি।

এখনও তিনটি আসনের ফল প্রকাশিত হয়নি। যে আসনগুলিতে ফল প্রকাশিত হয়নি, নির্বাচনের আগে তার মধ্যে একটি ছিল রিপাবলিকানদের দখলে, অন্য দুটি ডেমোক্র্যাটদের। এ বার সেনেটের দখল পেতে গেলে, নিজেদের আসনটি ধরে রেখে ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকে দুটি আসন ছিনিয়ে নিতে হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দলকে। আসনগুলো হল- নেভাডা, অ্যারিজোনা ও জর্জিয়া।নেভাডায় ৮০ শতাংশ ভোট গণনা শেষে এগিয়ে রয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী অ্যাডাম ল্যাক্সাল্ট। তিনি পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট। তাঁর বিপরীতে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কর্টেজ মাস্তো পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট।

নেভাডায় এখন পোস্টাল ভোট গণনা চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী শনিবারের আগে এখানকার চূড়ান্ত ফল পাওয়া না-ও যেতে পারে। অ্যারিজোনায় এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী মার্ক কেলি। সবশেষ হিসাবে, এ অঙ্গরাজ্যে ৬৯ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হয়েছে। মার্ক পেয়েছেন ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট। রিপাবলিকান প্রার্থী ব্লেক মাস্টার্স পেয়েছেন ৪৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট। এই দুই আসনে যদি এই ধারায় ফল আসে, অর্থাৎ নেভাডায় রিপাবলিকান ও অ্যারিজোনায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জয় পান, তাহলে দুই দলেরই সিনেটে আসনসংখ্যা ৫০ হবে।

ডেমোক্রেটিক পার্টির একটি আসন কম হলেও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সমর্থনে তারা ৫০–এ পৌঁছাবে। সে ক্ষেত্রে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে যাবে, তা নির্ধারিত হবে জর্জিয়ার ফলাফলে। তবে শিগগিরই সেখানকার চূড়ান্ত ফল জানা যাচ্ছে না। কেননা জর্জিয়ায় দ্বিতীয় দফায় ভোটে যেতে হচ্ছে। আর সেটা হবে আগামী ৬ ডিসেম্বর।জর্জিয়ায় ডেমোক্রেটিক প্রার্থী রাফায়েল ওয়ারনক ও রিপাবলিকান প্রার্থী হার্শেল ওয়ালকারের কেউই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাননি। সবশেষ হিসাবে এখানে ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা করা হয়েছে। রাফায়েল পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। হার্শেলের ঝুলিতে গেছে ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট।

এ পরিস্থিতিতে জর্জিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেট ব্র্যাড রাফেনসপারজার স্থানীয় সময় বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘১০ হাজারের কম ভোট গণনা করা বাকি। কিন্তু দুই প্রার্থীর কেউই প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। তাই আমরা আগামী ৬ ডিসেম্বর আবারও ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা করেছি।’ এ সময় ভোটারদের উদ্দেশে ব্র্যাড বলেন, ‘আরেকবার ঘর থেকে বেরিয়ে আসুন। ভোট দিন।’এদিকে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পথে রয়েছে রিপাবলিকান পার্টি। তবে কত বেশি আসনে দলটি জয়ী হবে, তা এখন দেখার বিষয়। নিম্নকক্ষের ৪৩৫ আসনের মধ্যে ২০৯টিতে জয় পেয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থীরা।

ডেমোক্রেটিক প্রার্থীরা ১৯১টি আসনে জয় পেয়েছেন। প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য মোট ২১৮টি আসনে জয় প্রয়োজন। আরও ৩৫টি আসনে ফলাফল ঘোষণা বাকী আছে। দুদলই এখনও আশায়, হাউসের দখল নেবে তারাই। তবে একটু বাড়তি আশার আলো রিপাবলিকান শিবিরে। কারণ আর মাত্র ৯টি আসন পেলেই হাউস তাদের দখলে চলে আসবে।

মধ্যবর্তী এই নির্বাচনে রিপাবলিকানরা যদি শেষ পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পায়, তাহলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডেমোক্র্যাট সরকারকে আইন পাস করতে বেগ পেতে হবে। এমনকি বাইডেন প্রশাসনের অনেক বিষয় নিয়ে রিপাবলিকানরা তদন্ত শুরু করতে পারবেন। আর কংগ্রেসের উভয় কক্ষ রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে বাইডেনের সামনের দুই বছরের পথ চলা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়বে। মার্কিন ইতিহাস বলছে, প্রেসিডেন্ট যে দলের, সেই দল অন্তর্বর্তী নির্বাচনে হাউস বা সেনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?