অনলাইন ডেস্ক, ৭ অক্টোবর।। প্রতিবেশী মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য চীন পাকিস্তানকে বেছে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনই বলা হয়েছে থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর এক নিবন্ধে। ইয়ান নাইঙ ছদ্মনামে চীন-মিয়ানমার বিষয়ক এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক লিখেছেন ওই নিবন্ধ। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দেশটিতে ব্যাপক চীনবিরোধী বিক্ষোভ-মিছিল সংঘটিত হয়।
দেশটির বিরাট একটি অংশ মনে করে, জান্তা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বেইজিং। এই মনোভাব বুঝতে পেরে চীন দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে তলে তলে সামরিক জান্তার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে। চীন রাশিয়ার মতো খোলাখুলি মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীকে সমর্থন কিংবা অস্ত্রসহায়তাও দিতে পারে না। এমনকি জান্তা বাহিনীকে দেওয়া চীনা সহায়তা পশ্চিমাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে।
সে ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে পাকিস্তানের সহায়তা নিতে পারে বেইজিং। সম্প্রতি মায়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বেশ কয়েক দফা রাশিয়া সফর করেছেন। দেশটির কাছ থেকে যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার ও ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছেন। বেইজিং বিষয়টিকে মায়ানমারে নিজেদের অস্ত্রের বাজার হারানোর ঝুঁকি হিসেবে দেখছে। চীনের এই উদ্বেগের মধ্যে জান্তা সরকারকে নিরাপত্তা ইস্যুতে সামরিক সহযোগিতা দিতে চীনের হয়ে গোপনে এগিয়ে এসেছে পাকিস্তান। পাকিস্তান মায়ানমারের বিমানবাহিনীকে জেএফ-১৭ থান্ডার ব্লক-২ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করছে বলে খবর বেরিয়েছে।
২০১৮ সালে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানের কাছ থেকে জেএফ-১৭ থান্ডার মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কিনেছিল ৫৬ কোটি ডলারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই যুদ্ধবিমানগুলোর যৌথ নির্মাতা পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স এবং চীনের চেংদু অ্যারোস্পেস করপোরেশন। বিষয়টি এখানেই সীমাবদ্ধ নেই। মায়ানমার পাকিস্তানের কাছ থেকে ৬০ এবং ৮১ মিলিমিটার মর্টার, এম-৭৯ গ্রেনেড এবং ভারী মেশিনগানও কেনার পরিকল্পনা করছে। ইসলামাবাদ মায়ানমারের জান্তা সরকারের কড়া সমালোচক ছিল একসময়। বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গা নৃগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে পাকিস্তান বেশ সরব ছিল।
বিপরীতে মায়ানমারও রাখাইনে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করার অভিযোগ তুলেছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। তবে এখন দুই দেশের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচে যাচ্ছে, এর মূল কারিগর চীন। বেইজিংই পাকিস্তান ও মিয়ানমারের মধ্যে অস্ত্র চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের দাবি, চীন গোপনে মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়িয়েছে। সেই গোপন সহযোগিতার অংশ হিসেবে বেইজিং জান্তা সরকারকে অস্ত্র সরবরাহ করতে ইসলামাবাদকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। কারণ, বেইজিং মিয়ানমারে গভীর চীনবিরোধী মনোভাব এবং জান্তাকে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি ফাঁস হলে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক।
অভ্যুত্থানের পরপরই মায়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পায়। মিয়ানমারের অনেকেই বিশ্বাস করেন, অভ্যুত্থানে বেইজিংয়ের হাত ছিল এবং অভ্যুত্থানের পরপরই বেইজিং জান্তা বাহিনীর নিন্দা করা থেকে বিরত থাকলে সেই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। ফলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত তেল-গ্যাসের পাইপলাইন উড়িয়ে দেওয়াসহ সব চীনা পণ্য বয়কটের আহ্বান জানায় জান্তাবিরোধী জনতা। আর এই ভয়েই চীন নিজে সরাসরি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ না করে বরং পাকিস্তানকে ব্যবহার করছে।