অনলাইন ডেস্ক, ৭ অক্টোবর।। ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালের তৈরি কাশির সিরাপ খেয়ে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় ৬৬টি শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে ভারত ও বিশ্বজুড়ে। এমনকি জানা গেছে, ওই সিরাপ শুধুমাত্র রপ্তানির জন্য তৈরি করা হয় এবং ভারতে বিক্রি করা হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) চলতি সপ্তাহে জানায়, তারা ভারতের মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালের তৈরি চারটি সিরাপ গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখেছে।
সেগুলোর মধ্যে যে পরিমাণ ডাইইথাইলিন গ্লাইকল ও ইথাইলিন গ্লাইকল পাওয়া গেছে তা ‘অগ্রহণযোগ্য’। এই দুটি উপাদান বিষাক্ত হতে পারে এবং সেগুলোর কারণে কিডনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ওষুধ তৈরিতে গ্লিসারিনের সস্তা বিকল্প হিসেবে এই দুটি উপাদান ব্যবহৃত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে চারটি সিরাপ পরীক্ষা করেছে সেগুলো হলো- প্রোমেথাজিন ওরাল সলিউশন, কফেক্সমালিন বেবি কফ সিরাপ, মেকফ বেবি কফ সিরাপ এবং ম্যাগ্রিপ এন কোল্ড সিরাপ।
এদিকে অভিযোগ ওঠার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে হরিয়ানা রাজ্যে অবস্থিত মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালের অফিস। স্বাভাবিক ভাবেই শঙ্কা দেখা দেয় যে, ভারতেও সেসব কাশির সিরাপ বিক্রি হয় কিনা। তবে এপ্রসঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিশু মৃত্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এসব সিরাপ ভারতে বিক্রি হয় না। ভারতীয় সংস্থার তৈরি হলেও তা কেবলমাত্র অন্য দেশে রপ্তানি করার জন্য তৈরি করা হতো। মেডেন ফার্মাসিউটিক্যাল নামের ওই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, পশ্চিম আফ্রিকার নানা দেশে বিষাক্ত ওষুধ রপ্তানি করেছে তারা। বিশেষ কয়েকটি কফ সিরাপ খাওয়ার ফলে শিশুদের কিডনি বিকল হয়ে গেছে।
পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বেশ কিছু বিষাক্ত কেমিক্যাল রয়েছে ওই চার কফ সিরাপের মধ্যে। এই ওষুধ খাওয়ার ফলে পেট ব্যথা, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। তারপরেই কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারই ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই চার সিরাপের নমুনা পরীক্ষা করতে কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে তাদের পরীক্ষার তথ্য ভারতকে দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, পরীক্ষার তথ্য পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া হরিয়ানা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনিল ভিজ বলেছেন, পরীক্ষায় যদি ‘ভুল কিছু পাওয়া যায় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’৷
তবে মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালের পরিচালক নরেশ কুমার গয়াল বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তারা বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে জানতে পেরেছেন। তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন বলেও দাবি করেন। উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত মেডেন ফার্মাসিউটিক্যাল কেবল গাম্বিয়াতে ওইসব সিরাপ রপ্তানি করে বলে জানিয়েছে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাই বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলেই ধারণা করা হচ্ছে।