প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানের আনুষ্ঠানিক সূচনা, রাজ্যে সামাজিক ভাতা বেড়ে ২ হাজার টাকা

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১৭ সেপ্টেম্বর।। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সামাজিক ভাতা প্রকল্পে ভাতা ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করা হয়েছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাস থেকেই তা কার্যকর হবে।

আজ আগরতলায় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১ নং হলে আয়োজিত প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে এই ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্যে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান কর্মসূচির বাংলা ও ককবরক ক্যাম্পেইন সং, বাংলা, ককবরক, ইংরেজি ভাষায় একটি পুস্তিকা, প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান ড্যাশবোর্ডের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ।

এই উপলক্ষে অভিযান কর্মসূচির রূপরেখা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী উত্তর মহারাণীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ২৪ ঘন্টার স্বাস্থ্য পরিষেবার ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর দেশের যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিন। প্রধানমন্ত্রীর এই জন্মদিবসকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য আজ থেকে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানের সূচনা করা হয়েছে।

আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। তিনি বলেন, শুধু কথাই নয়, বর্তমান রাজ্য সরকার কাজে বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিশা ও নির্দেশনায় রাজ্যের প্রতি ঘরে সুশাসন পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার এই অভিযান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস, আশা আকাঙ্খা ও স্বপ্ন পূরণে রাজ্য সরকার জনকল্যাণে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।

জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার মানোন্নয়নে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ পৌঁছে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, দলমতের উর্ধে উঠে জনকল্যাণে কেন্দ্র এবং রাজ্য। সরকারের রূপায়িত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচিগুলির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সবকা সাথ, সবকা বিকাশ এবং সবকা বিশ্বাস প্রতিফলিত হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পগুলির কাজ অনেকটাই সফলভাবে রূপায়িত হয়েছে। যেসব কাজ অবশিষ্ট রয়েছে তা আগামী নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য রাজ্যে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি আজ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা সদর, মহকুমা ও ব্লকস্তরে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনও রাজ্য বা সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর নামে রাজ্যে যেসকল প্রকল্প এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হচ্ছে তা বিস্তারিত তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। এক্ষেত্রে এইসব প্রকল্পগুলির সফল বাস্তবায়নে তিনি রাজ্যবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন। অনুষ্ঠানে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা অনুষ্ঠান আয়োজনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দেশ স্বরাজ লাভ করে।

এখন প্রয়োজন সু-রাজ অর্থাৎ সুশাসন। সু-রাজের মাধ্যমে প্রত্যেক মানুষের জীবনকে স্পর্শ করাই হলো সরকারের প্রধান কাজ। আর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সেই অভিমুখেই কাজ করে চলছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৭২তম জন্মদিনে আজ রাজ্যে শুরু হয়েছে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান।

কারণ প্রধানমন্ত্রী সমর্পণের ভাবনা নিয়ে জনগণের জন্য কাজ করা শিখিয়েছেন। উপমুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের মধ্যে ত্রিপুরাই প্রথম যেখানে অ্যাসপিরেশনাল ব্লক ঘোষণার মধ্য দিয়ে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা, মাইক্রোগ্রিডের ব্যবহার, বায়োভিলেজ গঠনের মাধ্যমে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে।

রাজ্য সরকারের বিশ্বাস উন্নতি তখনই হয় যখন সমাজ ও সরকার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে। সেই কারণেই কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামীণ বিকাশ, কৃষি, পঞ্চায়েত ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে পুরস্কৃত হয়েছে রাজ্য। রাজ্যের জনগণের উন্নয়নে সরকার কি কাজ করেছে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান শেষের পর রিপোর্ট কার্ডের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।

অনুষ্ঠান উপলক্ষে এদিন উপমুখ্যমন্ত্রী রিমোট টিপে পদ্মবিল ব্লকের রতনপুর ভিলেজ কমিটির গ্রামীণ বাজারের সোলার স্ট্রিট লাইটের উদ্বোধন করেন। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জানান, এই অভিযানের মাধ্যমে রাজ্যের জনগণের কাছে আমরা পূর্বে কোথায় ছিলাম, কোথায় আছি এবং কোথায়। যাবো তার একটি রূপরেখা ফুটে উঠবে।

রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে এই কর্মসূচির বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে যাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যে কোনও ধরনের প্রকল্প থেকে যোগ্য সুবিধাভোগীরা বাদ না যান। তিনি বলেন, রাজ্যের বিকাশ কর্মসূচিতে প্রত্যেক জনগণকে যুক্ত করাই হলো বিকাশমুখী তথা জনমুখী সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিশা নির্দেশনায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রত্যেকটি রাজ্যে উন্নয়ন এক অন্য ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা গ্রামীণ এবং শহুরি প্রকল্পে প্রায় ৩ লক্ষ পাকা ঘর, ৫৪ শতাংশ বাড়িতে পানীয়জলের ব্যবস্থা, কোভিডকালীন সময়ে বিনামূল্যে রেশন সামগ্রী ও টিকাকরণ করার মধ্য দিয়ে এই সরকার রাজ্যের প্রতিটি জনগণের জন্য কাজ করে চলেছে।

জল জীবন মিশনে সম্প্রতি আরও ১৬৬ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, পুলিশ মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী।

উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, পুরনিগমের কর্পোরেটরগণ সহ বিভিন্ন দপ্তরের সচিব, অধিকর্তা, আধিকারিক, বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীগণ।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?