স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৬ আগস্ট।। আগরতলার নরসিংগড়ে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ২টি হাফওয়ে হোম খোলা হচ্ছে। এই হোমে যে সমস্ত মানসিক রোগী চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন অথচ থাকার জন্য বাড়ি বা অন্যকোন জায়গা নেই তাদেরকে এই হোমে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।
আজ সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তার কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের অতিরিক্ত অধিকর্তা এল রাঞ্জল এই সংবাদ জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, দিব্যাঙ্গজনরা যাতে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা যথাযথভাবে পেতে পারেন সেজন্য দিব্যাঙ্গজনদের সবাইকে ইউনিক আইডি কার্ড (ইউডিআইডি) দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ২৭,৩৫৮ জনকে এই কার্ড দেওয়া হয়েছে। দিব্যাঙ্গজনদের। চিহ্নিতকরণ এবং তাদের ইউডি আইডি কার্ড সরবরাহ করার জন্য জেলা দিব্যাঙ্গজন পুনর্বাসন। কেন্দ্র’র (ডিডিআরসি) পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্লকে নিয়মিতভাবে শিবির করা হচ্ছে।
তিনি জানান, দিব্যাঙ্গজনদের নানারকম চলনসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করার জন্য নিয়মিতভাবে বিভিন্ন জায়গায় শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে শতাধিক এধরণের শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। এবং এগুলি প্রায় ৪০০০ চলনসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, উত্তরজেলা, খোয়াই, সিপাহীজলা এবং দক্ষিণ ত্রিপুরায় ৪টি নতুন ডিডিআরসি খোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রী রাস্কুল জানান, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে এই মুহুর্তে রাজ্য সরকারের ৩১টি এবং ৩টি কেন্দ্রীয় সরকারের পেনসন প্রকল্পে ৩,৮৯,৪৩৯ জনকে বিভিন্ন ধরণের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ভাতা পাচ্ছেন ১,৫৮, ১৯৭ জন এবং রাজ্য সরকারের আওতায় বিভিন্ন সামাজিক ভাতা পাচ্ছেন ২,৩১,২৪২ জন। ভাতাপ্রাপকদের মধ্যে ১৫,৩৭১ জন হচ্ছেন দিব্যাঙ্গন। তিনি জানান, গত ২ বছরে নতুনভাবে ৩৩,০৮৫ জনের ভাতা অনুমোদন করা হয়েছে।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী মাত্রবন্দনা যোজনায় চলতি অর্থবছরে ৩৬০৬ জন সুবিধা পেয়েছেন। তিনি জানান হিংসা বা অন্যকোন ঘটনায় মহিলারা আক্রান্ত হলে তারা যাতে তৎক্ষনাৎ সহায়তা পেতে পারেন সেই লক্ষ্যে রাজ্যে ১৮১ মহিলা হেল্প লাইন খোলা হয়েছে। যেকোন মহিলা এই নম্বরে ডায়েল করে সহায়তা পেতে পারেন বা নানারকম তথ্যও জানতে পারবেন।
তিনি জানান ন্যাশানাল ইন্সটিটিউট অফ সোসাল ডিফেন্স’র (এনআইএসডি) সহায়তায় অলঙ্কিত অ্যাসাইনমেন্ট লিমিটেড রাজ্যে সিনিয়ার সিটিজেন হেল্পলাইন খোলার উদ্যোগ নিয়েছে। মেলার মাঠে এই সেন্টারটি চালু করা হচ্ছে এবং এর ট্রায়াল রান ইতিমধ্যেই সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই হেল্প লাইনটি চালুর অপেক্ষায় রয়েছে এবং চলতি মাসের মধ্যেই এর কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের অতিরিক্ত অধিকর্তা জানান, ৫৬টি আইসিডিএস প্রজেক্টের আওতায় এই মুহুর্তে রাজ্যে ১৯১১টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালু রয়েছে। এগুলিতে ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়সী ৩,২৭,৪০৩টি শিশু এবং ৫৬,২১৮ জন গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের নাম নথিভুক্ত করা আছে এবং তাদের বিভিন্ন সহায়তা করা হচ্ছে। তিনি জানান, রাজ্যের ৮টি জেলার জন্য সম্প্রতি ২৬০টি নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে উত্তর, ধলাই এবং গোমতী জেলায় ৪৫টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে চিহ্নিত করা থাকবে শুধুমাত্র ব্লু শরনার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য। তিনি জানান, যেসমস্ত শিশু দারুনভাবে পুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছে তাদের পোষণ অভিযানের মাধ্যমে সহায়তা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এ ধরণের ৯১৮৮ টি শিশুকে এই প্রকল্পে পুষ্টকর খাবার দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে।
শ্রী রাস্কুল জানান, গর্ভবতী মায়েদের সহায়তা করার জন্য ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে মুখ্যমন্ত্রী মাজুপুষ্টি উপহার প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পে গর্ভবতী মহিলাদের ৫০০ টাকা করে চারটি কিস্তিতে মোট ২০০০ টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৪৭৭৫ জন মহিলাকে সহায়তা করা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের উপঅধিকর্তা অমৃতা মজুমদার, সুমিতা সেন, ডেপুটি কমিশনার ফর ডিজেবিলিটি অচিন্ত কিলিকদার প্রমুখ।