স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২ আগস্ট।। ত্রিবর্ণ রঞ্জিত আমাদের জাতীয় পতাকা দেশের সার্বভৌমত্ব, গৌরব, রাষ্ট্রবাদী চেতনা, দেশপ্রেম আর মহান আত্মত্যাগের ঐতিহ্য। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য এই জাতীয় পতাকার মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করা। দেশভক্তির এই ভাবনাকে সুদৃঢ় করতেই ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা:) মানিক সাহা ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ কর্মসূচিকে রাজ্যব্যাপী সফল করার জন্য রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ডা: সাহা বলেন, “হর ঘর তিরঙ্গা’ কর্মসূচির মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ এবং রাষ্ট্রবাদী চেতনাকে দেশের জনগণের মধ্যে জাগ্রত করা। দেশের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গ দর্শনে এক নতুন চিন্তা চেতনায় দেশপ্রেম ও দেশের মুক্তির সংগ্রামে নিবেদিত বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর লক্ষ্যেই জাতীয় এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা হচ্ছে আমাদের গর্ব।
আমাদের দেশাত্মবোধের পরিচায়ক ও রাষ্ট্রিয় চেতনার অনুভূতি। রাষ্ট্রীয় চেতনার এই অনুভূতিকে রাজ্যবাসীর মধ্যে জাগ্রত করতে রাজ্যেও আগামী ১৩-১৫ আগস্ট হর ঘর তিরঙ্গা কর্মসূচি পালন করা হবে। এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই অভিযানকে সফল করতে রাজ্যের ৮টি জেলায় ৫ লক্ষ ৩৭ হাজার জাতীয় পতাকা বিতরণ করা হবে।
এই ৫ লক্ষ ৩৭ হাজার জাতীয় পতাকা হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্প দপ্তর, ভারত সরকারের নিয়োজিত সংস্থা, টিআরএলএম এবং টিইউএলএম মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসকগণ বিভিন্ন স্ব-সহায়ক দলের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা সরবরাহের ব্যবস্থা করবেন। রাজ্যের নাগরিকগণ প্রত্যেক জেলার পঞ্চায়েত অফিস, ভিলেজ কমিটি, ওয়ার্ড অফিস ও রেশন সপ থেকে স্বল্পমূল্যে জাতীয় পতাকা সংগ্রহ করতে পারবেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, হর ঘর তিরঙ্গা কর্মসূচিকে সফল করতে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জনগণ যাতে স্বল্পমূল্যে জাতীয় পতাকা কিনেন এজন্য সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান করা হচ্ছে। এছাড়াও হর ঘর তিরঙ্গা কর্মসূচিকে সফল করতে রাজ্যব্যাপী প্রচার অভিযানের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ লক্ষ্যে হোর্ডিং, ফ্যাক্স লাগানো হয়েছে, এফ এম চ্যানেলে প্রচার অভিযান চলছে, বাংলা ও ককবরক ভাষায় অডিও প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়াও বাংলা ও হিন্দি ভাষায় প্রেরণামূলক ভিডিও তৈরি করা হবে, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের দ্বারা স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলিতে আবেদন জানানো হবে। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রীর আবেদনমূলক ভিডিওবার্তা প্রচারিত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে আগরতলা শহরের উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ প্রাঙ্গণ, সিটি সেন্টার, হেরিটেজ পার্ক, এমবিবি কলেজ ও ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ‘সেলফি বুথ’ তৈরি করা হয়েছে। এই সেলফি বুথে জাতীয় পতাকার সাথে ছবি তুলে harghartiranga.com এই ওয়েবসাইটে আপলোড করা যাবে। তাছাড়াও নিজ নিজ বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ছবি এই ওয়েবসাইটে আপলোড করা যাবে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, গত ১৭ জুলাই, ২০২২ মাননীয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহজী, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জি কৃষাণ রেড্ডি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের আধিকারিকদের সাথে হর ঘর তিরঙ্গা কর্মসূচিকে সফল করতে বিভিন্ন সময়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়াও গত ২৫ জুলাই, ২০২২ মুখ্যসচিবের উপস্থিতিতে বিভিন্ন দপ্তরের সচিব ও ৮ জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করা হয়েছিল। ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ মহান এই কর্মসূচিকে সফল করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রবাদী চিন্তা চেতনাকে সুদৃঢ় করার জন্য রাজ্যবাসীর প্রতি আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী।
সাংবাদিক সম্মেলনে আজাদি কা অমৃত মহোৎসব বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আজাদি কা অমৃত মহোৎসব ৫টি থিমের উপর ভিত্তি করে পালন করা হচ্ছে। আজাদি কা অমৃত মহোৎসব উপলক্ষ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ইভেন্টে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য ইভেন্টগুলির মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা অলনাইনে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৮০৫ জন সুবিধাভোগীর মধ্যে প্রথম কিস্তি প্রদান, এম বি বি বিমানবন্দরের নতুন সুসংহত টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন, মিশন-১০০ বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প এবং মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনার উদ্বোধন, ত্রিপুরার ৫০তম পূর্ণরাজ্য পালনের অঙ্গ হিসেবে পোস্টাল স্ট্যাম্প প্রকাশ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নাগরিকদের স্টেট সিভিল অ্যাওয়ার্ড এবং স্টেটহুড অ্যাওয়ার্ড প্রদান ইত্যাদি।
এই সমস্ত অনুষ্ঠানের ফটোগ্রাফও amritmahotsav.nic.in পোর্টালে আপলোড করা হয়েছে। আজাদি কা অমৃত মহোৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন ইভেন্ট এবং ফটোগ্রাফ amritmahotsav.nic.in পোর্টালে আপলোড করার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে জানান।