স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৩০ জুলাই।। বর্তমান যুগে বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবনযাত্রা কল্পনা করা যায় না। দেশের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার বিগত ৮ বছর ধরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি ক্ষেত্রকে উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহন করে কাজ করছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলেই দেশের জনগণের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে *উজ্জ্বল ভারত উজ্জ্বল ভবিষ্যত পাওয়ার ২0৪৭’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশবাসীর প্রতি ভাষন রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একথা বলেন। উল্লেখ্য, আজাদি কা অমৃত মহোৎসব উপলক্ষ্যে ২৫-৩০ জুলাই দেশের বিভিন্ন জেলাতে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। সচিবালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আয়োজিত আজকের এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা ও মুখ্যসচিব জে কে সিনহা অংশগ্রহণ করেন।
ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান একুশ শতকের নতুন ভারতের নতুন লক্ষ্য ও নতুন সফলতার প্রতীক। আজাদি কা অমৃত মহোৎসব পালনের সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার আগামী ২৫ বছরে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আগামী ২৫ বছরে দেশের উন্নয়নকে গতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানকে আরোও সহজতর করার জন্য বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের বড় অবদান থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন যে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির সূচনা বা শিলান্যাস করা হয়েছে সেগুলি ভারতের শক্তি সুরক্ষা, গ্রীণ টেকনোলজির ভবিষ্যত সুরক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। এই প্রকল্পগুলি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সূচনা হলেও তার সুফল পুরো দেশ পাবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার গ্রীণ হাইড্রোজেন উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। এই লক্ষ্যে লাদাখ ও গুজরাটে ২টি গ্রীণ হাইড্রোজেন প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়েছে। এ ধরণের প্রকল্প দেশে এই প্রথম গ্রহন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৮ বছর পূর্বে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কেমন ছিল সে সম্পর্কে দেশবাসী অবাত রয়েছেন। সে সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন যেমন কম ছিল, তেমনি বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছিল। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে জেনারেশন, ট্রান্সমিশন, ডিস্ট্রিবিউশন এবং কানেকশন এই ৪টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। বিদ্যুৎ পরিষেবা উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই ৪টি বিষয় একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন, পুরো দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ, ট্রান্সমিশন ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ এবং দেশের প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।এরফলেই বর্তমানে দেশের প্রতিটি গ্রাম-শহরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর পাশাপাশি বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ৮ বছরে দেশে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকাঠামো তৈরী করা হয়েছে। সমগ্র দেশকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করতে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার ৭০ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
সৌভাগ্য যোজনায় ৩ কোটি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে কার্যকর ও ফলপ্রসু করতে এবং বিদ্যুৎকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিগত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কার আনা হয়েছে। দেশে ‘ওয়ান ন্যাশন ওয়ান পাওয়ার গ্রিড ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে যা আজ দেশের শক্তি হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের উপরও জোর দিয়েছে। কারন বিদ্যুৎ সাশ্রয় মানেই ভবিষ্যতকে বাচানো। দেশের বিদ্যুৎশক্তি ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে ভারত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উপর গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহন করে কাজ করছে। সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে দেশ আজ প্রশংসনীয় স্থানে রয়েছে।দেশের গ্রাম-শহরের প্রতিটি বাড়িতে এবং সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সোলার সিস্টেম স্থাপনের উপর কেন্দ্রীয় সরকার জোর দিচ্ছে।
সোলার সিস্টেম স্থাপনের ব্যবস্থাকে সহজতর করার লক্ষ্যেই আজ ন্যাশনাল রুফটপ সোলার পোর্টালের সূচনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ৮ বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিভিন্ন রাজ্য সরকার মিলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নে একজোটে কাজ করছে। আগামী দিনেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে আরোও মজবুত করার দায়িত্ব নেওয়ার সংকল্প নিতে হবে। তবেই দেশকে আগামী ২৫ বছরে উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কুসুম, প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা ইত্যাদি প্রকল্পে উপকৃত ত্রিপুরা সহ বিভিন্ন রাজ্যের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মত বিনিময় করেন। রাজ্যের পক্ষ থেকে খোয়াই জেলার কালাহা রিয়াৎ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মত বিনিময় করেন। সে সময় রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মন এবং বিদ্যুৎ দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডেও তার সাথে ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কয়েকটি রাজ্যের বিদ্যুৎ প্রকল্পের সূচনা ও শিলান্যাস করেন এবং ন্যাশনাল রুফটপ সোলার পোর্টালের সূচনা করেন।