স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২২ জুন।। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবের মেজাজে আগামীকাল রাজ্যের ৪টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ করার লক্ষ্যে সব রকমের ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আজ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা কার্যালয়ের মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক কিরণ গিত্যে। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক জানান, আগামীকাল সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে।
চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এই উপনির্বাচনে বিভিন্ন দলের ২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে ৬-আগরতলা কেন্দ্রে ৬ জন, ৮-টাউন বড়দোয়ালি কেন্দ্রে ৬ জন, ৪৬-সুরমা (এসসি) কেন্দ্রে ৫ জন এবং ৫৭-যুবরাজনগর কেন্দ্রে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ভোটার রয়েছেন ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৩২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৯৩ হাজার ৬৩৮ জন। মহিলা ৯৫ হাজার ৩৮৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৫ জন। এই উপনির্বাচনে ৬৭৩ জন সার্ভিস ভোটার ইলেকট্রনিক্যালি ট্রান্সমিটেড পোস্টাল ব্যালট সিস্টেমে (ইটিপিবিএস)-র মাধ্যমে ভোট প্রদান করেছেন। এছাড়া পোস্টাল ব্যালটে ৮৪১ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। তাছাড়া ৮০ ঊর্ধ্ব বয়সের ১ হাজার ১০৭ জন, ১৮৪ জন দিব্যাঙ্গজন ভোটার অ্যাবসেন্টি ভোটার ক্যাটাগরিতে প্রথমবারের মতো বাড়িতেই পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিয়েছেন।
এই ক্যাটাগরিতে ৬-আগরতলা কেন্দ্রে ২৮১ জন, ৮-টাউন বড়দোয়ালি কেন্দ্রে ৩৭৭ জন, ৪৬-সুরমা (এসসি) কেন্দ্রে ২০৬ জন এবং ৫৭-যুবরাজনগর কেন্দ্রে ৪২৭ জন ভোট দিয়েছেন। পোস্টাল ব্যালটে মোট ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক কিরণ গিতো আরও বলেন, ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মোট ২২১টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে ৬-আগরতলা ও ৮-টাউন বড়দোয়ালি কেন্দ্রে ২টি করে এবং ৪৬-সুরমা (এসসি) এবং ৫৭-যুবরাজনগর কেন্দ্রে ১টি করে মহিলা পরিচালিত ভোটকেন্দ্র রয়েছে।
তিনি জানান, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট পরিষেবা, পানীয়জল, দিব্যাঙ্গজনদের জন্য র্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়াও বৃষ্টি হলে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের অপেক্ষার জন্য ওয়েটিং শেডেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই ৪টি বিধানসভা এলাকাতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই ওয়েবকাস্টিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এরজন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র সামগ্রী এবং কর্মীর ইতিমধ্যেই নিযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ভোটারদের ভোটদানের ক্ষেত্রে যে কোনও ধরনের সমস্যা নিরসনে এবার প্রতিটি কেন্দ্রের জন্যই আলাদা করে হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে।
এরমধ্যে ৬-আগরতলা কেন্দ্রের জন্য হেল্পলাইন নম্বর হলো ০৩৮১-২৩২৫৯৩৭/ ২৩৮৩৬৪৬ এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর হলো ১৮৬৩২০ ১৬৬৫। ৮-টাউন বড়দোয়ালি কেন্দ্রের জন্য হেল্পলাইন নম্বর ০৩৮১-২৩২৫১৩৭ ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ৮১৩২৯৪১৭৬৪।
৪৬ সুরমা (এসসি) কেন্দ্রের জন্য হেল্পলাইন নম্বর ০৩৮২৬-২৬২২২২ ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ৯৪৮-৫০১১০৫১ এবং ৫৭-যুবরাজনগর কেন্দ্রের জন্য হেল্পলাইন নম্বর হলো ০৩৮২২ ২২০২০২ এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ৭০৫৫৬৮৪৬০। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানান, রাজ্যে প্রায় ১০০ শতাংশ ভোটারকেই ভোটার আইডি কার্ড প্রদান করা হয়েছে। এই বছরের জানুয়ারি মাসে আরও ৪০ হাজার নতুন ভোটার এবং ৩০ হাজার সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ড রাজ্যের ভোটারদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে।
ভোটার আইডি কার্ড ছাড়াও রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদিত ১২টি বিভিন্ন ধরনের পরিচয়পত্র যথা- আধার কার্ড, এমজিএন রেগা জবকাৰ্ড, ছবি সহ ব্যাঙ্ক অথবা পোস্ট অফিসের পাসবুক, হেলথ ইন্স্যুরেন্স স্মার্ট কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্যান কার্ড, আরজিআই অনুমোদিত স্মার্ট কার্ড, পাসপোর্ট, ছবি সহ পেনশন নথিপত্র ও সার্ভিস আইডেন্টিটি কার্ড, এমপি/ এমএলএ/ এমএলসি-দের অফিসিয়াল আই কার্ড, ইউনিক ডিজাবিলিটি আইডি কার্ড (ইউডিআইডি) দিয়েও ভোটদান করা যাবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানান, রাজ্যের উপনির্বাচনকে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে স্থানীয় আরক্ষা বাহিনীর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এরমধ্যে আগরতলার দুটি কেন্দ্রের জন্য ১০ কোম্পানি এবং সুরমা ও যুবরাজনগর কেন্দ্রের জন্য আরও ১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়াও টিএসআর-এর ৫টি কোম্পানিও ভোটদানকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য নিযুক্ত থাকবে। উল্লেখ্য, ২২১টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের মধ্যে ১০টিকে অতি স্পর্শকাতর, ৫৯টি স্পর্শকাতর, ৪টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৪৮টি কেন্দ্রকে স্বাভাবিক বলে আরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক কিরণ গিত্যে ভোটারদের ভয়মুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে নিজ নিজ ভোট প্রদান করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত নির্বাচন আধিকারিক ঊষাজেন মগ, আইজি (আইন শৃঙ্খলা) জি এস রাও প্রমুখ।