অতি বর্ষণে আগরতলা শহরের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, রাজপথে নৌকা চালাল প্রশাসন

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১৭ জুন।। অতি বর্ষণের ফলে আগরতলা শহরের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল জলপ্লাবিত হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, আতঙ্ক বা উদ্বেগের কিছু নেই। রাজ্য প্রশাসন পরিস্থিতির উপর প্রতিনিয়ত নজর রাখছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

আজ সন্ধ্যায় মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব দপ্তরের প্রধান সচিব পুনিত আগরওয়াল, নগরোন্নয়ন দপ্তরের অধিকর্তা তমাল মজুমদার এবং স্টেট প্রজেক্ট অফিসার শরৎ দাস আজকের বর্ষণজনিত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দপ্তরের যৌথ পদক্ষেপের বিষয়সমূহ সাংবাদিকদের অবহিত করেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান সচিব শ্রী আগরওয়াল জানান, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা আজ ইন্দ্রনগরস্থিত ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে শহরের পরিস্থিতি নিরীক্ষণ এবং পর্যালোচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ৭টি দপ্তরকে নিয়ে ইতিমধ্যেই পর্যালোচনা করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রশাসন ২৪ ঘন্টা নজরদারি জারি রেখেছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে বলে প্রধান সচিব শ্রী আগরওয়াল জানান।

সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান সচিব আরও জানান, আগরতলা শহরের জল নিষ্কাশনের কাজে ১৬টি পাম্পকে কাজে লাগানো হয়েছে। বৃষ্টির পূর্বাভাষ সংক্রান্ত তথ্য এবং এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থাদি গ্রহণ করার জন্য রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসকদের আগাম বার্তা পাঠানো হয়েছে। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স, আপদা মিত্র সহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে লাগানো হয়েছে।

এখন পর্যন্ত আগরতলা শহরে ৮টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে এবং শিবিরে আশ্রয় নেওয়া প্রায় চার শতাধিক লোককে মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্যাকেট ফুড বিতরণ করা হয়েছে। শ্রী আগরওয়াল জানান, জরুরি পরিস্থিতিতে জনগণের সহায়তার জন্য ৫টি নম্বর চালু রয়েছে। টোল ফ্রি ১০৭৭, আগরতলা পুরনিগমের ৯৮৬৩২০১৬৬৫, ইমার্জেন্সি রেসপন্স সিস্টেমের (১১২ নম্বর, সিএম হেল্পলাইন ১৯০৫ এবং স্টেট ইমার্জেন্সি সেন্টারের ১০৭০ নম্বরটিতে যোগাযোগ করে জরুরি সহায়তা পাওয়া যাবে।

এছাড়াও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কোনও সমস্যা দেখা দিলে ১৯১২ এবং ১৮৬৩৫৯৬০৮১ এই নম্বরে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সাংবাদিক সম্মেলনে নগরোন্নয়ন দপ্তরের অধিকর্তা তমাল মজুমদার জানান, আগরতলা পুরনিগমের পক্ষ থেকে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবাই একসাথে কাজ করছে। আগরতলা শহরের পাম্পগুলি চালু রয়েছে এবং বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টারটি ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে বলে শ্রী মজুমদার জানান।

রাজস্ব দপ্তরের স্টেট প্রজেক্ট অফিসার শরৎ দাস জানান, এখন পর্যন্ত রাজ্যের কোথাও থেকে কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। অন্য জেলা ও মহকুমায় বৃষ্টি হলেও জল আটকে পড়ার কোনও খবর নেই। প্রত্যেক জেলাশাসকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষয়ক্ষতির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সহায়তা করার জন্য রাজস্ব দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

এছাড়াও জেলাশাসকদের পরিস্থিতির উপর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ রাখা, প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজন অনুসারে প্রস্তুত রাখার জন্য দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় আগরতলায় ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে যেখানে গত এক মাসে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৯৫ মিলিমিটার। তিনি জানান, হাওড়া নদী এবং জুরি নদীর জলস্তর বাড়ছে।

জলসম্পদ দপ্তর এই বিষয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ রাখছে। এখন পর্যন্ত শহরের যে ৮টি জায়গায় ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে সেগুলি হলো রাধামাধব মন্দির, ইন্দ্রনগর স্কুল, বিটারবন কমিউনিটি হল, ঋষি কলোনীর কাসম আলি স্কুল, মোল্লাপাড়া স্কুল, প্রতাপগড় স্কুল, দাসপাড়া অনাদি স্কুল এবং মহারাণী তুলসীবতী বালিকা বিদ্যালয়।

অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের কর্মীরা আজ শহরে অক্সিলিয়াম স্কুলের আটকে পড়া বাসের ছাত্রীদের তৎপরতার সাথে দ্রুত উদ্ধারের কাজ করে এবং অন্যত্র উদ্ধারের কাজে সহায়তা করছে। শ্রী দাস জানান, আগামীকালও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাষ রয়েছে বলে আবহাওয়া দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।

 

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?