অনলাইন ডেস্ক, ৩ জুন।। ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও উপাসনালয় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেড়েছে মন্তব্য করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার মর্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক (আইআরএফ) প্রতিবেদন প্রকাশকালে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ’প্রতিবেদনে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার বিশ্বজুড়েই হুমকির মুখে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং বিভিন্ন ধর্মের মানুষের আবাসস্থল ভারতে আমরা মানুষ এবং উপাসনালয়ের উপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণ দেখেছি’।
বৃহস্পতিবার দিন শেষে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে গত বছর জুড়ে হত্যা, হামলা এবং ভয় দেখানো সহ ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর অসংখ্য নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে, অসংখ্য গো-রক্ষা মূলক হামলা তথা গরু জবাই বা গরুর মাংসের ব্যবসার অভিযোগে অহিন্দুদের উপর হামলা।
এতে ধর্মান্তর ঠেকাতে করা আইনের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে গত বছর ভারতের ত্রিপুরা, রাজস্থান এবং জম্মু ও কাশ্মীরে কয়েকটি ঘটনায় মুসলিমদের পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও উল্লেখ করা হয়। মুসলিমরা ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ১৪%।
ভারতের ১৩৫ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ হিন্দু, যারা গরুকে পবিত্র বলে মনে করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত অনেক রাজ্যই গরু জবাইয়ের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে বা পুরনো আইন আরও কঠোর করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থা মূল্যায়ন করে তৈরি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আইআরএফ বিভাগ এটি প্রস্তুত করে। এর নেতৃত্বে ছিলেন আইআরএফ দূত রাশাদ হুসাইন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের কিছু কর্মকর্তা দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এবং উপাসনালয়ের ওপর ক্রমবর্ধমান হামলা না দেখার ভান করছেন বা সমর্থন করছেন’।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার আরও বলেছেন, ধর্মীয় স্বাধীনতা কেবল মৌলিক অধিকারই নয়, এটা ‘পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারও’ বটে।
গত এপ্রিলে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, ভারতে মানবাধিকারসম্পর্কিত ‘সাম্প্রতিক উদ্বেগজনক ঘটনাপ্রবাহের’ ওপর নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র।
আইআরএফ প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ) প্রকাশিত প্রতিবেদনের থেকে আলাদা। ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগজনক দেশের (সিপিসি)’ তালিকায় রাখতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে গত এপ্রিলে টানা তৃতীয় বছরের মতো সুপারিশ করেছিল কমিশন। ধর্মীয় স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে খর্ব করা দেশগুলোকে সিপিসি তালিকায় রাখা হয়।
বছরের শেষের দিকে সিপিসি তালিকা প্রকাশ করে থাকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ইউএসসিআইআরএফের সুপারিশ বাস্তবায়নে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাধ্য নয়। গত তিন বছর ভারতকে সিপিসি তালিকায় রাখেনি তারা।
ওদিকে, শুক্রবার টুইটারে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, মার্কিন কর্মকর্তার করা মন্তব্যগুলো ’ভুল তথ্যে ভরা’।
তিনি আরও লিখেন যে, ’এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভোটব্যাংকের রাজনীতির চর্চা হচ্ছে। আমরা অনুরোধ করব যে, বিশেষ উদ্দেশ্য-প্রণোদিত তথ্য এবং পক্ষপাতদুষ্ট মতামতের উপর ভিত্তি করে কোনো বিষয়ে মূল্যায়ন তৈরি করা উচিত নয়’।