অনলাইন ডেস্ক, ৩১ মে।। রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ খেরসনে উৎপাদিত গম-ভুট্টা ও সূর্যমূখী তেলবীজ রাশিয়ায় পাঠানো হচ্ছে। গত বছর উৎপাদিত হয়েছিল এসব শস্য।
খেরসনে ক্ষমতাসীন রুশ সামরিক প্রশাসনের উপ প্রধান কিরিল স্ত্রেমৌসভ রাশিয়ার বৃহত্তম সংবাদ সংস্থা তাস নিউজ এজেন্সিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘যদিও রাশিয়ার খাদ্যগুদামগুলোতে প্রচুর শস্য রয়েছে, তারপরও নতুন এসব শস্য সংরক্ষণ করার মতো জায়গা এখনও রয়েছে আমাদের’।
তিনি বলেন, ‘খেরসনের লোকজন এখন বাস্তববাদী চিন্তা-ভাবনা করছে এবং রাশিয়ার ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের খাদ্যশস্য ও তেলবীজ বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে’।
খেরসন থেকে সূর্যমুখী তেলবীজের যেসব চালান যাচ্ছে, সেসব থেকে রাশিয়ার কারখানাগুলো ইতিমধ্যে তেল উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্ত্রেমৌসভ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য বেশ আগেই অভিযোগ করেছিলেন- গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে শুরু হওয়া যুদ্ধে ইতোমধ্যে ইউক্রেনের যেসব এলাকা রাশিয়া দখল করেছে, সেসব অঞ্চল থেকে গম ও খাদ্যশস্য চুরি করছে রুশ সেনারা।
খাদ্যশস্য রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে অন্যতম ইউক্রেন। খাদ্যশস্যের আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিল ডাটার তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ভুট্টা রপ্তানিকারক দেশ; আর গম রপ্তানির হিসেবে বিশ্বে ইউক্রেনের অবস্থান ষষ্ঠ।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে সূর্যমুখী তেলের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা দেশ ইউক্রেন।
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে সীমান্তে আড়াই মাস সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ঘোষণা দেওয়ার দুদিন আগে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
সোমবার ৯৬তম দিনে পৌঁছেছে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের অভিযান। ইতোমধ্যে দেশটির দুই বন্দর শহর খেরসন ও মারিওপোল, দোনেৎস্ক প্রদেশের শহর লিয়াম এবং মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ার আংশিক এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে রুশ বাহিনীর হাতে।
ইউক্রেনের প্রথম যে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ রুশ বাহিনী নিয়েছিল, তার নাম খেরসন। গত ২ মার্চ খেরসন দখল করে রুশ সেনারা।
এদিকে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের অবরুদ্ধ সমুদ্রবন্দরগুলোতে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি জাহাজের গতিপথে পেতে রাখা হয়েছে মাইন।
ফলে, ইউক্রেনের গুদামগুলোতে আটকা পড়েছে প্রায় আড়াই কোটি টন গম-ভুট্টা ও লাখ লাখ টন তেলবীজ। আটকে থাকা এসব শস্য গত বছর চাষ করা হয়েছিল। যদি অবিলম্বে এসব শস্যের চালান আন্তর্জাতিক বাজারে না পৌঁছায়, সেক্ষেত্রে চলতি বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরুর মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।