ক্রীড়া প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ মে।। বিশ্ব আসরে ত্রিপুরার রাকেশ। গা শিহরিত হয়ে ওঠার মতো খবর। দেশের জার্সি গায়ে দিয়ে বিশ্ব আসরে খেলতে নামবে রাজ্যের ছেলে। নাম রাকেশ দেববর্মা। সমাজের অন্যতম বন্ধু কৃষক পরিবারে তার জন্ম হতে পারে, কিন্তু সে এখন দেশের গর্ব। অপ্রত্যাশিত স্বপ্ন পূরণ করতেই সোমবার বিকেলের বিমানে দিল্লি পাড়ি দিলেন রাকেশ দেববর্মা।
দেশের রাজধানীতি গোটা ভারতীয় দলের সঙ্গে ৫ দিন অনুশীলন করার পর ২২ মে দুবাইয়ের বিমানে চড়বেন মান্দাইয়ের অক্ষাত গ্রাম উদয় কুবরা পাড়ার ২৭ বছর বয়সী ওই তরুণটি। ২৩-২৯ মে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ ফাজ্জা বিশ্ব প্যারা ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায়। ওই আসরে ত্রিপুরার প্রথম খেলোয়াড় হিসাবে জাতীয় দলে স্থান করে নিলেন রাকেশ। এদিন রাজ্য ছাড়ার আগে এন এস আর সি সিতে রাজ্যের গর্ব ওই সাঁতারুটিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ক্রীড়া পর্ষদের যুগ্ম সচিব সরযূ চক্রবর্তী। তিনি বিশ্বাস করেন দুবাইয়ে দেশের পতাকা তুলে ধরবেই রাকেশ। অগ্রিম শুভেচ্ছাও জানান তিনি।
২৬ বছর আগেও ওর বাবা দ্বীজেন এবং মা কুমারি দেববর্মা ভাবতেও পারেননি বিকলাঙ্গ ওই ছেলের জন্য গর্বে বুক ফুলে উঠবে একদিন। এদিন এন এস আর সি সিতে কথা বলার ফঁাকে বাবা-মা দুজনের চোখই ছলছল করে উঠেছিলো। এখন ওনাদের স্বপ্ন বিশ্ব আসরে সাফল্য পেয়ে ঘরে ফিরে আসুক তঁাদের ৪ মেয়ে এবং ১ ছেলের দ্বিতীয় রাকেশ। অথচ রাকেশের ক্রীড়া জীবন শুর সাঁতারে ২০০৫ সালে। ওই সময় উমাকান্ত আকাডেমিতে পড়াশুনা করতো হোস্টেলে থেকে। সাঁতার কোচ দীপক দাসের কাছেই সাঁতারে হাতেখড়ি বর্তমানে রাজ্যের গর্ব ওই খেলোয়াড়টির।
২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল- ওই ১০ বছরে জাতীয় প্যারা সঁাতারে ত্রিপুরাকে এনে দিয়েছিলো ১৫ টি স্বর্ণ এবং ৫ টি রৌপ্য পদক। কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি হোস্টেল থেকে বের হয়ে যাওয়ায় এখন আর সঁাতার করতে পারছেন না উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা রাকেশ। কোচ দীপকের নির্দেশেই এরপর ভর্তি হয় ব্যাডমিন্টনে। এবছর রাজ্যে প্রথমবারে মতো অনুষ্ঠিত হয় প্যারা ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা। তাতে দুর্দান্ত খেলে জায়গা করে নেন ত্রিপুরা দলে।
গেলোবছর ২৩-২৭ ডিসেম্বর ভুবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় আসরে নিজের দক্ষতার পরিচয় দেন রাকেশ। সেই সুবাদে জায়গা করে নেন ৪৭ সদস্যের জাতীয় দলে। ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েও একরাশ দুশ্চিন্তায় কাটাতে হয়েছিলো দিনের পর দিন। দুশ্চিন্তা একটাই, আর্থিক অসঙ্গতি। তখনই ‘নূন আনতে পান্থা ফুরোয়’ পরিবারের পাশে দাড়িয়েছে এ ডি সি, রাজ্যের ক্রীড়া মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরি, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী শ্বান্তনা চাকমা এবং রাজ্যের গ্রেজেটেড সংস্থার কর্তারা।
রাজ্য ছাড়ার আগে রাকেশ বলেন,”চেষ্টা করবো দেশের নাম উজ্জ্বল করে ফিরতে। এর জন্য ত্রিপুরাবাসীর আশির্বাদ কামনা করি”। ছাত্রের সাফল্য পাওয়া নিয়ে আশাবাদী ওর কোচ দীপক দাস। তিনি বলেন,” যে কোনও ইভেন্টে রাজ্যের প্রথম খেলোয়াড় হিসাবে প্যারা বিশ্ব আসরে সুযোগ পাওয়া বড় ব্যাপার। যথেষ্ট পরিশ্রমী ছেলে। বিশ্বাস করি সাফল্য পেয়েই ফিরবে”।