অনলাইন ডেস্ক, ১৫ মে।। মেজর জেনারেল কিরিলো বুদানভ নামে ইউক্রেনের একজন শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা দাবি করেছেন যে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার জন্য রাশিয়ায় অভ্যুত্থান শুরু হয়ে গেছে এবং পুতিন বা অন্য কেউই তা ঠেকাতে পারবে না।
স্কাই নিউজের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে মেজর জেনারেল কিরিলো বুদানভ ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, আগামী আগস্ট মাসের মাঝামাঝি নাগাদ ইউক্রেন যুদ্ধ একটি নতুন মোড় নেবে এবং চলতি বছরের শেষের দিকে গিয়ে যুদ্ধ পুরোপুরি থেমে যাবে।
তিনি বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে হেরে গেলে পুতিনকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে এবং তার দেশ ভেঙে পড়বে। এর ফলে অবশেষে রাশিয়ান ফেডারেশনে নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটবে। আর এই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গেছে এবং তারা সেই পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
রাশিয়ায় এখন কোনও অভ্যুত্থান চলছে কিনা জানতে চাইলে ইউক্রেনীয় এই সামরিক কর্মকর্তা উত্তর দেন, ‘হ্যাঁ। তারা সেইদিকেই যাচ্ছে এবং এটি ঠেকানো অসম্ভব’।
বুদানভ আরও দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন খুব খারাপ মানসিক এবং শারীরিক অবস্থার মধ্যে আছেন এবং তিনি খুব অসুস্থ। এমনকি তার ক্যান্সারের মতো রোগও হয়েছে।
তথ্য যুদ্ধের অংশ হিসেবেই তিনি এসব প্রচারণা ছড়াচ্ছেন কিনা বুদানভকে এমন ইঙ্গিত করা হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার দাবির ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে নিশ্চয়তা দেন।
তিনি বলেন, ‘এটাই আমার পেশা, এটাই আমার কাজ, আমি না জানলে কে জানবে?’
পুতিনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কানাঘুষা চলছে। ইউক্রেন অভিযান শুরুর পর থেকেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জনসম্মুখে খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে ইউক্রেনের মারিওপোল নিয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর সঙ্গে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বৈঠকে অংশ নেন তিনি।
তবে শোইগুর সঙ্গে কথা বলার সময় পুতিনকে টেবিল আঁকড়ে ধরতে দেখা গেছে। তার মুখও ছিল কিছুটা ফোলা। এমনকি পুতিন স্থির হয়ে বসে ছিলেন না। তিনি তার পা নাড়াছিলেন। পুতিনের এই কর্মকাণ্ড তিনি পারকিনসনস রোগে আক্রান্ত, এই গুজবকেই উসকে দিচ্ছে বলে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইল ও ডেইলি সান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
ডেইলি সান জানায়, পুতিনের সর্বশেষ উপস্থিতি চমকপ্রদ। কারণ পুতিনকে তার চিরচেনা সাহসী রূপে দেখা যায়নি। বরং তাকে বিভ্রান্ত দেখাচ্ছিল। ১২ মিনিটের ওই বৈঠকের প্রায় পুরোটা সময়ই পুতিন টেবিল আঁকড়ে ছিলেন।
তার বৃদ্ধাঙ্গুল টেবিলের উপরে থাকলেও বাকি চারটি আঙ্গুল দিয়ে তিনি সজোরে টেবিল ধরে ছিলেন। বৈঠকের বেশির ভাগ সময় ক্রমাগত দুই পা নাড়তেও দেখা যায়।
এ ব্যাপারে টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটির বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর এরিক বুসি দ্য সান অনলাইনকে বলেন, কয়েক বছর আগে আমরা যে মানুষটিকে দেখেছি তার তুলনায় এই চিত্র আশ্চর্যজনকভাবে দুর্বল পুতিনের।
তিনি বলেন, সুস্থ পুতিনের চেহারা এমন নয়। পুতিনের পাগুলোও বেশ চিকন দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে অঘোষিত কোনো রোগে তার ওজন কমে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তার ফোলা মুখ দেখে তাকে আরও অসুস্থ মনে হচ্ছে। বিশেষ করে কয়েক বছর আগের ছবি ও ভিডিওতে দেখা পুতিনের তুলনায়।
পুতিনের কথিত অসুস্থতার প্রতিবেদনগুলো নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট দপ্তর ক্রেমলিন কখনও মন্তব্য করেনি। ধারণা করা হয় যে ক্রেমলিন বিভিন্ন বৈঠকে পুতিনের উপস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি তাকে সবসময় একজন শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য বৈঠকগুলোতে তার উপস্থিতির সময়ও সীমিত রাখা হয়।
এদিকে ইউক্রেনের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা বুদানভ স্কাই নিউজকে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন যে, যদিও ইউরোপ রাশিয়াকে একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখে থাকে, ইউক্রেন জানে যে, ‘রাশিয়াকে যে একটি পরাশক্তি হিসেবে প্রচারণা চালানো হয় তা একটি কল্পকাহিনী’। বাস্তবে রাশিয়া অতটা শক্তিশালী নয়। এটি হল অস্ত্রধারী লোকদের একটি বিশৃঙ্খল দল।
তিনি বলেন, রাশিয়ান বাহিনীকে ইউক্রেনের খারকিভের চারপাশ থেকে তাড়িয়ে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাশিয়া প্রচুর জনবল এবং অস্ত্রশস্ত্রও হারিয়েছে।