অনলাইন ডেস্ক, ১৩ মে।। শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন দেশটির ৫ বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা রনিল বিক্রমাসিংহে।
আজ স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে তাকে শপথ পড়ান বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর।
এর আগে গত সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিক্রমাসিংহে। এরপরই তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বলে শোনা যায় এবং বিক্রমাসিংহের দল বিষয়টি নিশ্চিত করে।
রনিল বিক্রমাসিংহের জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৪ মার্চ। সিলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনার পর সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি।
৭৩ বছর বয়সী এই ইউএনপি নেতা ৪৫ বছর ধরে সংসদে আছেন। তার ব্যাপক আন্তর্জাতিক সংযোগ আছে এবং তাকে একজন দক্ষ আলোচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাকে পশ্চিমপন্থী মুক্তবাজার সংস্কারবাদী হিসাবে দেখা হয়।
প্রসঙ্গত, রনিল বিক্রমাসিংহে এর আগেও পাঁচবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৯৩-১৯৯৪, ২০০১-২০০৪, ২০১৫-২০১৫ (১০০ দিন), ২০১৫-২০১৮ এবং ২০১৮-২০১৯ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ১৯৯৪-২০০১ এবং ২০০৪-২০১৫ সাল পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা। দুই কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশটিতে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। একই সঙ্গে জ্বালানি তেল, ওষুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। কখনও কখনও দিনে ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে।
এসব সংকটের কারণে জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না পেয়ে তাদের মনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই ক্ষোভ এখন তীব্র বিক্ষোভ আর সংঘাতে রূপ নিয়েছে। যার ফলে ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেঙে যায় দেশটির মন্ত্রিসভা।
চলতি সপ্তাহেই নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে। আজ এক বিবৃতিতে গোতাবায়ে রাজাপাক্ষে জানান, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও দেশের কার্যক্রম পরিচালনায় নতুন সরকার গঠনে আমি পদক্ষেপ নিচ্ছি। সংসদের হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়ার জন্য কিছু সাংবিধানিক সংস্কার করা হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে গতকাল বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে গোতাবায় রাজাপাক্ষে জানিয়েছেন তিনি পদত্যাগ করবেন না। দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।
ওদিকে, গোতাবায়া রাজাপাক্ষে পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করায় শ্রীলঙ্কায় সেনা অভ্যুত্থানের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। কলোম্বোর রাস্তায় বিপুল সংখ্যায় সৈন্যদের অস্ত্রসজ্জিত গাড়িবহর দেখে গুজব ছড়ায় যে, দেশে সেনা অভ্যুত্থান হতে পারে।
বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভেঙ্গে গতকাল দ্বিতীয় রাতের মতো বিক্ষোভ করেছেন। তাদের দাবি এখন শুধু প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ।
একজন বিক্ষোভকারী বিবিসি তামিল সার্ভিসকে বলেছেন, ‘কারফিউ ভেঙ্গে আমাদের এই বিক্ষোভ করতে হচ্ছে কারণ আমাদের কোনো উপায় নেই। আমরা এখনো ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। এখনও কেরোসিন, পেট্রোল,ডিজেল এবং বিদ্যুৎ নেই’।
কলম্বোর বিক্ষোভকারী কাভিনদ্য থেন্নাকুন বিবিসিকে বলেন, ‘গত ৩০ দিন আপনি কোথায় ছিলেন? মানুষের ওষুধ, খাদ্য কিছুই নেই। পুরো দেশ স্থবির হয়ে আছে। তিনি (গোতাবায়া রাজাপাকসে) যে সংস্কারগুলো প্রস্তাব করছেন, সেগুলো আমাদের প্রয়োজন নেই। আমরা এখন চাই তার পদত্যাগ। গোতাবায়া রাজাপাক্ষে কেন সেটি বুঝতে পারছেন না’।
কিন্তু গোতাবায়া রাজাপাক্ষে বলেছেন, তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন, তার উদ্দেশ্য ঐক্যমত্যের সরকার তৈরি করা। কিন্তু প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বলেছে, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের অংশ হবে না।