অনলাইন ডেস্ক, ১২মে।। প্রথমে করোনা সংকট, তারপর ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে গিয়ে জ্বালানি ও কাচামাল সংকট- একের পর এক ধাক্কার মুখে ইউরোপ যখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন নতুন এক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ব্রেক্সিটকে ঘিরে ব্রিটেনের সঙ্গে নতুন সংঘাত। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রেক্সিট চুক্তির অন্তর্গত নর্থার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকলের অংশবিশেষ পুরোপুরি বাতিল করার উদ্যোগ নিচ্ছেন, এমন সম্ভাবনা আর উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে শুল্ক সীমা কার্যকর করতে গিয়ে বাস্তব সমস্যার দোহাই দিয়ে ব্রিটেন সেই ব্যবস্থায় রদবদল করতে চায়। ইইউ সেই দাবি না মানলে চুক্তি ভাঙার হুমকি দিচ্ছে ব্রিটেন। শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কা সত্য হলে ব্রিটেনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানো কঠিন হবে।
ইইউ ব্রিটেনকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যে দীর্ঘ টালবাহানার পর দুই পক্ষের সম্মতি নিয়ে স্বাক্ষরিত ব্রেক্সিট চুক্তিতে কোনো রদবদল আদৌ সম্ভব নয়। সেই কাঠামোর শর্ত অমান্য না করে কোনো ব্যবস্থা সম্ভব হলে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে ব্রিটেন একতরফাভাবে চুক্তিভঙ্গ করলে সে দেশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে ব্রাসেলস। আয়ারল্যান্ড, জার্মানি ও ইইউ একতরফা পদক্ষেপ সম্পর্কে ব্রিটেনকে সতর্ক করে দিয়েছে। ইইউ-র মধ্যস্থতাকারী মারশ শেফচোভিচ এক বিবৃতিতে ব্রিটেনের উদ্দেশ্যে চুক্তি লঙ্ঘন না করেই ‘সৃজনশীল সমাধানসূত্র’ খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইইউ-র প্রত্যাশিত কড়া অবস্থানের মুখে ব্রিটেন উত্তর আয়ারল্যান্ডে শান্তি বজায় রাখতে যাবতীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে। সেইসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাবারও আশ্বাস দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। জনসনের এক মুখপাত্র বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নি।
ব্রেক্সিট চুক্তির অন্তর্গত উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল লঙ্ঘন করা হলে ইউরোপের বুকে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টি হবার আশঙ্কা রয়েছে। আইরিশ প্রজাতন্ত্র ও ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশের মধ্যে নাজুক শান্তি নষ্ট হলে আবার সশস্ত্র সংগ্রামের অশনি সংকেত দেখা যেতে পারে। উত্তর আয়ারল্যান্ডের সাম্প্রতিক নির্বাচনের পর সরকার গড়ার ক্ষেত্রে অচলাবস্থা সে রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
ইইউ-পন্থি ক্যাথলিক দল শিন ফেন বিপুল ভোটে নির্বাচনে জয়লাভ করেও জোট সরকার গড়তে পারছে না। কারণ ব্রিটেনপন্থি প্রোটেস্টান্ট ডিইউপি দল উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল বাতিল করার দাবি না মানলে সরকারে যোগ দিতে অস্বীকার করছে। ১৯৯৮ সালের শান্তি চুক্তি অনুযায়ী সরকারে দুই পক্ষেরই প্রতিনিধিত্ব আবশ্যিক।
শিন ফেন উত্তর আয়ারল্যান্ডের সব মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিয়ে ভোটারদের মন জয় করতে সমর্থ হয়েছে। তবে আপাতত সুশাসনের এজেন্ডা সামনে রাখলেও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হিসেবে আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে পুনরেকত্রিকরণ চায় এই দল। উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রোটোকলের ফলে ব্রিটিশ ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশের সমুদ্র সীমা এবং আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে উন্মুক্ত স্থল সীমানা সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে বলে এই দল মনে করে।