চিকিৎসক ও নার্সদের ভাল ব্যবহারের ফলে রোগীদের মনোবল অনেক গুণ বেড়ে যায় : মুখ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১২ মে।। চিকিৎসক ও নার্সদের ভাল ব্যবহারের ফলে রোগীদের মনোবল অনেক গুণ বেড়ে যায়। রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠার ক্ষেত্রে তা বড় ভূমিকা নেয়। আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আন্তর্জাতিক নার্সেস ডে উপলক্ষে ‘সেবাজ্যোতি-২০২২’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রোগীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের পাশাপাশি ধৈর্য সহ চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করাই হলো নার্সদের মূল ধর্ম। তাই নার্সিং পেশার সঙ্গে যুক্ত সব সেবিকাদের মধ্যে সুন্দর ব্যবহার করার গুণ, মধুর বাচন শৈলীর পাশাপাশি উপস্থিত বুদ্ধি থাকা খুবই প্রয়োজন। তবেই রোগীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হবে এবং চিকিৎসা প্রদানে সহায়ক হবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধকের ভাষণে বলেন, মানুষ সাধারণত অসুস্থ হলেই হাসপাতালে আসেন। তখন তাদের হাসিমুখে সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রহণ করে ধৈর্য সহকারে চিকিৎসা প্রদান করাই চিকিৎসক সহ নার্সদের প্রধান কর্তব্য।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একটি রাজ্যের উন্নয়নের অন্যতম মাপকাঠি হল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়ন। রাজ্য সরকার শুরু থেকে রাজ্যের জনগণকে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছে। বর্তমানে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়নের ফলেই রাজ্য থেকে বহির্রাজ্যে রেফার করা রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। রাজ্যের প্রধান হাসপাতাল জিবিতেই এখন ওপেন হার্ট সার্জারি, বাইপাস সার্জারি, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্ট, নিউরো সার্জারির মতো জটিল রোগের চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে মহিয়সী নারী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল যে কর্মপদ্ধতি, কর্মনিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণতার আদর্শ রেখে গেছেন তা নার্সদের নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। তবেই ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল সর্বদা আমাদের মনের মধ্যে জীবিত থাকবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরাকে একটি আত্মনির্ভর রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হলে রাজ্যের মহিলাদের স্বশক্তিকরণ করে তুলতে হবে।

রাজ্য সরকার মহিলা স্বশক্তিকরণে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে তা রূপায়ণের লক্ষ্যে কাজ করছে। এই পলিসিতে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের পাশাপাশি মহিলাদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ হাসপাতাল, কর্মরত মহিলাদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ, মহিলাদের নামে জমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে রাজস্বের ছাড় সহ বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের মহিলারা নিজেদের স্বরোজগারী করার লক্ষ্যে স্বসহায়ক দলে যুক্ত রয়েছেন। বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ৩ লক্ষ ২৫ হাজারের মতো মহিলা বিভিন্ন স্বসহায়ক দলের সঙ্গে যুক্ত। শুধু তাই নয় মহিলাদের অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী করার জন্য প্রায় ৪০০ নতুন রেশন শপ মহিলাদের নামে প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

ইতিমধ্যেই ১৫০টির মতো রেশন শপ মহিলাদের নামে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে আগে কখনও মহিলাদের নামে রেশন শপ প্রদানের উদাহরণ নেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সুন্দর ব্যবহার ও কর্মনিষ্ঠা এবং কাজের প্রতি বিশ্বাস মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। আর এই ইতিবাচক মনোভাবই মানুষের জীবনে সফলতা এনে দিতে পারে। স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে নার্স সহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে রাজ্যসভার সাংসদ ডা. মানিক সাহা বলেন, নার্সিং স্টাফ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা ছাড়া একা চিকিৎসকদের পক্ষে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা অসম্ভব। তাদের সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের ফলেই রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতি দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। নার্সরা দিনরাত মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন।

কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে অনেক নার্স তাদের জীবন বলিদান দিয়েছিলেন। তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান সাংসদ। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা নার্সিং কাউন্সিলের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন রেজিস্ট্রার রেবেকা দার্লং। অনুষ্ঠান মঞ্চে নার্সিংয়ের ক্ষেত্রে একটি অনলাইন রেজিস্ট্রেশন পোর্টালের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?