স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১১ মে।। স্বাস্থ্য পরিষেবার সাথে যুক্ত নার্সরা হলেন মায়েদের মতো। মায়েদের মতোই তাদের মধ্যে ধৈর্যশীল মানসিকতা এবং ভালো ব্যবহার করার গুণ থাকা আবশ্যক। তবেই রোগী ও নার্স সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হবে। আজ আইজিএম হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে জাতীয় নার্সিং সপ্তাহ এবং আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মেগা রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল এবং স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসা রোগীদের হাসিমুখে ও ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নার্সদের সব সময় সচেষ্ট থাকতে হবে। বহির্রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে নার্সরা হাসিমুখে ও ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করতে পারলে আমাদের রাজ্যের নার্সরা তা পারবে না কেন? উপস্থিত নার্সিং স্টাফদের প্রতি এই প্রশ্ন রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নার্সদের সবসময় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি ধৈর্য সহ চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানে তাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে ছোট ছোট বিষয়গুলি সমাধান করতে পারলেই নার্সরা এক নতুন ত্রিপুরা তৈরি করতে পারবে বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এক নতুন দিশায় চলছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত পরিবর্তনের ফলেই উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজ্য থেকে বহিরাজ্যে রেফার করা রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। আগে যেখানে রাজ্য থেকে হাজার হাজার রোগী বহির্রাজ্যে চিকিৎসার জন্য যেতেন। ফলে আগরতলা বিভিন্ন জনবহুল এখন আর বহির্রাজ্যের হাসপাতালগুলির বিজ্ঞাপন বেশি লক্ষ্য করা যায় না।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নের ফলেই জিবি হাসপাতালে বাইপাস সার্জারি, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্ট, নিউরো সার্জারির মতো জটিল রোগের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা সহ আইসিইউ যুক্ত শয্যা, অক্সিজেন যুক্ত শয্যা, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি ব্যবস্থা পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। উন্নত এই পরিকাঠামোই কোভিড মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো যা রয়েছে তার মাধ্যমে সঠিক পরিষেবা প্রদান করাই হচ্ছে পারদর্শিতার পরিচয়। রাজ্যের চিকিৎসক, নার্স সহ সকলের মধ্যে এই পারদর্শিতা রয়েছে বলেই কোভিড পরিস্থিতিকে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে। ভালো ব্যবহার, কর্মনিষ্ঠা এবং কাজের প্রতি বিশ্বাস মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। আর এই ইতিবাচক মনোভাবই মানুষকে সাফল্য এনে দিতে পারে। ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানে নার্সদের সব সময় উৎসাহ প্রদানের জন্য চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্য আধিকারিকদের প্রতি আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের চেয়ারম্যান রাজীব ভট্টাচার্য বলেন, নার্সরা সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্স সহ সকল স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীগণ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। কোভিড মোকাবিলার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ যথাযথভাবে পালনে তারা দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক ডা. দিলীপ দাস, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডা. শুভাশিস দেববর্মা, আইজিএম হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডা. শর্মিলা সরকার প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সহ অন্যান্য অতিথিগণ রক্তদান শিবির পরিদর্শন করেন এবং রক্তদাতাদের উৎসাহ প্রদান করেন।