অনলাইন ডেস্ক, ৭ মে।। শ্রীলঙ্কায় ফের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। সরকার বিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীকেও ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যার ফলে পরিস্থিতি আরও সহিংস হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার (৬ মে) মধ্যরাত এই থেকে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
শুক্রবার রাজধানী কলম্বো ছাড়াও অন্যান্য শহরে ধর্মঘটে নামে হাজার হাজার মানুষ। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে গোটাবায়া সরকারকে দায়ী করে অবিলম্বে তার পদত্যাগের দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।
একদল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী পার্লামেন্ট ভবন ঘেরাও করতে গেলে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে নিরাপত্তা বাহিনী। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে অসংখ্য স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। গণপরিবহণ বন্ধের কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
এর আগে চরম অর্থনৈতিক সংকট ও দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও তার সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করে দেশটির জনগণ। শুক্রবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় স্কুল-কলেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। এর প্রেক্ষিতেই আসে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার (৬ মে) শ্রীলঙ্কার প্রধান রফতানি প্রক্রিয়া অঞ্চল থেকে কমপক্ষে ৩ হাজার কারখানা শ্রমিক ধর্মঘটে যোগ দেন। ট্রেড ইউনিয়ন নেতা রাভি কুমুদেশ বলেন, আমরা প্রেসিডেন্টের (গোতাবায়া রাজাপক্ষে) নীতিগত ভুলগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি, যা দেশের অর্থনীতিকে দুর্দশার দিকে নিয়ে গেছে। তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।
আমদানিকৃত খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের ঘাটতির প্রতিবাদে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন শহরে থেমে থেমে বিক্ষোভ চলছে। শুক্রবার (৬ মে) শ্রীলঙ্কার বড় শহরগুলোর দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজধানী কলম্বোর প্রধান রেল স্টেশনও। ধর্মঘটে যোগ দেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও। তবে চালু রাখা হয় জরুরি পরিষেবা।
এদিকে সড়কের পাশাপাশি অনলাইনেও জোরদার হচ্ছে শ্রীলঙ্কার সরকারবিরোধী আন্দোলন। রাজাপক্ষে সরকারকে হটাতে আন্তর্জাতিক সংস্থার হস্তক্ষেপ চেয়েছে দেশটির নাগরিকরা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ‘সেভ শ্রীলঙ্কা’ নামে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের অধীনে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে আবেদন। এতে লঙ্কান সরকারের ভুল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত, রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কথা তুলে ধরা হয়।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও তার মন্ত্রিপরিষদকে উৎখাতে সম্প্রতি অনাস্থার ঘোষণা দেয় দেশটির প্রধান বিরোধীদল। পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবিওয়ারদেনার কাছে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
রাজাপক্ষে ও তার মন্ত্রিসভাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ২৫৫ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট দরকার পড়বে। দ্য ইউনাইটেড পিপলস ফোর্স কেবল ৫৪টি আসনের ওপর নির্ভর করতে পারে। এ ছাড়া কিছু ছোট দল ও ক্ষমতাসীন শ্রীলঙ্কা পিপলস ফ্রন্ট পার্টির দলত্যাগীদের ভোটও প্রত্যাশা করতে পারে তারা। এর আগে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব দিয়েছিল দ্য ইউনাইটেড পিপলস ফোর্স।
অর্থনৈতিক সংকট ও অব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের পদত্যাগের দাবিতে দেশটিতে অবিরাম বিক্ষোভ চলছে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর শ্রীলঙ্কায় এমন দুর্দিন আর দেখা যায়নি। সম্প্রতি বিদেশি ঋণ পরিশোধে অক্ষমতার ঘোষণা দিয়ে নিজেকে কার্যত দেউলিয়া হিসেবে ঘোষণা করে দ্বীপরাষ্ট্রটি। দেশটির আড়াই হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণের মধ্যে ৭০০ কোটি চলতি বছরেই শোধ করার কথা ছিল। বাকিটা ২০২৬ সালের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। বর্তমানে ১০০ কোটিরও কম বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে তাদের।