অনলাইন ডেস্ক, ৪মে।। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৯ মে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন মার্কিন ও পশ্চিমা কর্মকর্তারা।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, মার্কিন ও পশ্চিমা কর্মকর্তাদের ধারণা, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন অনবরত হোঁচট খেতে থাকায় পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন। কারণ, আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করা হলে রাশিয়া নিজেদের রিজার্ভ বাহিনীকে ইউক্রেনে পুরোপুরি মোতায়েন করতে সক্ষম হবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে শুরু হওয়া হামলাকে এখন পর্যন্ত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আসছে মস্কো, যার মূল উদ্দেশ্য ‘নাৎসিমুক্তকরণ’। ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চল জয়ের চেষ্টা করছে রাশিয়া।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর পরাজয়ের স্মরণে ৯ মে ‘বিজয় দিবস’ পালন করে রাশিয়া। দিনটির প্রতীকী তাৎপর্য এবং প্রচারণার গুরুত্ব পুতিন কাজে লাগাবেন বলে অনেক দিন থেকেই ধারণা করে আসছেন পশ্চিমা কর্মকর্তারা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ১৯৪৫ সালে নাৎসি বাহিনীকে পরাজিত করার স্মরণে ৯ মে ‘বিজয় দিবস’ পালন করে থাকে রাশিয়া। পশ্চিমা কর্মকর্তারা মনে করছেন, পুতিন দিনটির প্রতীকী তাৎপর্য এবং প্রচারণার গুরুত্ব কাজে লাগাবেন। তারই অংশ হিসেবে এদিন তিনি হয়তো ইউক্রেনে সামরিক অর্জন অথবা বড় ধরনের সংঘাতের ঘোষণা দেবেন, কিংবা দুটিরই ঘোষণা দিতে পারেন।
কর্মকর্তারা একটি ঘটনার জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করেছেন, সেটা হলো ৯ মে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন পুতিন।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস গত সপ্তাহে এলবিসি রেডিওকে বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি (পুতিন) তার বিশেষ অভিযান থেকে সামনে এগোবেন। তিনি ক্ষেত্র তৈরি করছেন, বলার জন্য যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন, ‘দেখো, এখন এটা নাৎসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এ জন্য আমার আরও মানুষ দরকার। শত্রুদের গোলার সামনে দাঁড় করাতে আরও সেনা দরকার।’
এমনটি হলে বিস্মিত হবেন না বলে জানান ওয়ালেস। তিনি বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই যে পুতিন মে মাসের ওই দিনটিতে ঘোষণা করতে যাচ্ছেন, আমরা এখন বিশ্বের নাৎসিদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। রুশ জনগণকে ব্যাপকভাবে সংগঠিত করতে হবে।’
যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা রুশ নাগরিকদের আরও উত্তেজিত করবে। আগ্রাসনের প্রতি জনমত ব্যাপকভাবে বাড়বে। এর কারণে রাশিয়ার আইনের অধীন পুতিন রিজার্ভ বাহিনী মোতায়েন এবং নাগরিকদের বাধ্যতামূলক সামরিক সেবায় নিয়োগের সুযোগ পাবেন।
পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন, ক্রমবর্ধমান লোকবলসংকটের কারণে এটা রাশিয়ার খুবই প্রয়োজন। প্রায় দুই মাস আগে আগ্রাসন শুরুর পর ইউক্রেনে কমপক্ষে ১০ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করে আসছে পশ্চিমা ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা।
৯ মে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ড লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণাও আসতে পারে। দক্ষিণে ওডেসায় বড় ধরনের অভিযান অথবা দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর মারিউপোলের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণেরও ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
সোমবার অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপে (ওএসসিই) নিযুক্ত মার্কিন দূত মাইকেল কারপেন্টার বলেন, মধ্য মে নাগাদ রাশিয়া লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করতে পারে—এমন ‘অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য’ গোয়েন্দা তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় খেরসন শহরকে ‘পিপলস রিপাবলিক’ ঘোষণা ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনাও মস্কোর আছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
একই দিন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, প্রচারণার উদ্দেশ্যে ৯ মে কাজে লাগানো যায়—এমন সবকিছুই রাশিয়া করবে, তা বিশ্বাস করার যথাযথ কারণ আছে। নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলগত ব্যর্থতা থেকে চোখ সরাতে নিশ্চিতভাবে রুশরা তাদের প্রচারণা আসলেই বাড়াচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র আরও বলেন, ৯ মে রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন—এমন গুঞ্জন তিনি দেখছেন। তিনি বলেন, ‘মস্কো যদি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানকে যুদ্ধ ঘোষণায় ব্যবহার করে, সেটা হবে নিতান্তই স্ববিরোধিতা।’