স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১ মে।। পরিবারে কোন সমস্যা দেখা দিলে বা সমাজে সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধানে মহিলারাই প্রথমে এগিয়ে আসেন। রাজ্যের ও দেশের অগ্রগতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মহিলাদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এভাবে মহিলাদের স্বশক্তিকরণ করাও সম্ভব হবে।
আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের মিলনায়তনে উত্তর-পূর্ব উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথাগুলি বলেন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা। উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের সহায়তায় গ্রামোন্নয়ন এবং সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা সরকার দেব, রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বর্ণালী গোস্বামী প্রমুখ অতিধিগণ এই উৎসবের উদ্বোধন করেন। আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের অঙ্গ হিসাবে উত্তর-পূর্ব উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
উত্তর-পূর্বের প্রতিটি রাজ্যেই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত আজ এই অনুষ্ঠানে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল, ‘উত্তর-পূর্বের উন্নয়নে নারীদের ভূমিকা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য উত্তর-পূর্বের আট রাজ্যের তিন জন করে মহিলাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। আমাদের রাজ্য থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে লেখিকা ক্রাইরি মগ চৌধুরী, জিমন্যাস্ট অস্মিতা পাল এবং প্রিয়াঙ্কা ভৌমিককে। প্রত্যেক রাজ্য থেকে একজন তাদের কাজের অভিজ্ঞতার কথা সবার সামনে তুলে ধরেন।
আজ এই অনুষ্ঠান মঞ্চে রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের মহিলা আধিকারিক ও কর্মচারীদেরও সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাদের কর্মক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য। অতিথিগণ তাদের স্মারক ও মানপত্র দিয়ে সংবর্ধনা জানান। উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে এই উৎসব শুরু হয়েছে গত ২৮ এপ্রিল থেকে। সমাপ্তি হবে ৪ নে সেদিন গুয়াহাটিতে উত্তর-পূর্ব উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
অনুষ্ঠানের মূল ভাবনার উপর আলোচনা করতে গিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, দেশভাগের পর দীর্ঘ বছর উত্তর-পূর্বাঞ্চল উপেক্ষিত ছিল। দেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হতে শুরু করে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার কারণে এই অঞ্চল এক সময় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে এই অঞ্চলের নারীদের।
উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের নারীদের ক্ষমতায়নে রাজ্য সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মহিলারা অংশগ্রহণ করছেন। মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করতে মহিলা স্বসহায়ক দল গঠন করা হচ্ছে। বর্তমানে রাজ্যে ৩৩ হাজার ১২৬টি মহিলা পরিচালিত স্বসহায়ক দল রয়েছে। তাতে যুক্ত আছেন ৩ লক্ষ ৮ হাজার মহিলা সদস্যা। নারীদের স্বশক্তিকরণে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণের কথা বলতে গিয়ে সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের কথাও তিনি তুলে ধরেন।
উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সঠিকভাবেই বলেছেন, দেশের অর্ধেক মানুষকে অর্থাৎ মহিলাদের পিছিয়ে রেখে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। রাজ্য সরকারও সেই দিশাতেই কাজ করছে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্বসহায়ক দলের ৫০ জন মহিলার সাফল্যের কথা সম্বলিত একটি পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন করেন অতিথিগণ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা বলেন, নারীদের অধিকার রক্ষায়, আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতিতে, নারী স্বশক্তিকরণে রাজ্য সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণ করছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি সমাজ কল্যাণ দপ্তরের বিভিন্ন কাজের কথা তুলে ধরেন। নেশামুক্ত ত্রিপুরা গঠনে নারীদের আরও বেশি করে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সমাজকল্যাণ মন্ত্রী।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক বলেন, মহিলারা শক্তিশালী হলে একটি পরিবার, পঞ্চায়েত রাজ্য, দেশ শক্তিশালী হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের নারীদের উন্নয়নে স্বশক্তিকরণে, অধিকার রক্ষায় কাজ করছেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর উত্তর-পূর্বাঞ্চল নতুন দিশায় এগিয়ে চলেছে। তিনি মহিলাদের কল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি উজ্জ্বলা যোজনায় রান্নার গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, রান্না করার সময় ধোঁয়ায় অনেক মহিলা নানা অসুখে ভোগেন। গ্যাস ব্যবহার করে রান্না করার জন্য মা বোনেরা প্রায় ১৩ শতাংশ অসুখ থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছেন। দেশে প্রায় ১২ কোটি শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে।
২০২৪ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয়জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষের জন্য যত পরিকল্পনা বা প্রকল্প রূপায়ণ করা হচ্ছে তার ৫০ শতাংশই মহিলাদের কল্যাণে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মহিলাদের স্বশক্তিকরণে জনধন যোজনা একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। সারা দেশে যে ৪৪ কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তার প্রায় ৫৬ শতাংশ অ্যাকাউন্ট মহিলারা খুলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নারীরা আত্মনির্ভর হলে ভারতও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৮ বছরে ৫০ বার উত্তর-পূর্বাঞ্চল সফর করেছেন। এর আগে কোন প্রধানমন্ত্রী তা করেননি। তাতেই প্রমাণিত প্রধানমন্ত্রী এই অঞ্চলের উন্নয়নে কতটা আগ্রহী। উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে তিনি বলেছেন ভারতের ইঞ্জিন।
তিনি বলেন, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনেই কাজ করে চলেছেন। গত চার বছরে ত্রিপুরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে। ত্রিপুরা এখন সারা দেশে পরিচিতি পেয়েছে।আজ এই অনুষ্ঠানে আট রাজ্যের যে নারীদের সম্মানিত করা হয় তাদের তিনি উষ্ণ অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে রাখেন, রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব জে কে সিনহা। তিনি আলোচনায় বিশেষ করে করোনা টিকাকরণে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের কথা এবং করোনা সংক্রমিতদের চিকিৎসায় মহিলা চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীদের উল্লেখযোগ্য অবদানের কথা তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নেন ডোনার মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব হরপ্রীত সিং, উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্ষদের সদস্য এয়ার মার্শাল অঞ্জন কুমার গোগই। সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা ও সমন্বয় দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন।