অনলাইন ডেস্ক, ২৭এপ্রিল।। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতকে কেন্দ্র করে কোনো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চায় না চীন। এবং তারা ইউক্রেন সংঘাত কূটনৈতিক পন্থায়ই সমাধানের পক্ষে। মঙ্গলবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এসব কথা বলেছেন।
ওয়েনবিন বলেন, ‘কেউ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চায় না… রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের শান্তি আলোচনাকে সমর্থন দেওয়া উচিৎ’।
গত সোমবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে করা এক মন্তব্যের ব্যাপারে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়ন সম্পর্কে পশ্চিমা সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে ওয়েনবিন এসব মন্তব্য করেন।
এ ছাড়া ওয়েনবিনের মতে ইউক্রেনের সশস্ত্র সংঘাতকে দীর্ঘায়িত হতে দেওয়া উচিত নয়। এ সময় তিনি ইউক্রেন সংঘাতে সৃষ্ট নেতিবাচক পরিণতিকে প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের মতে এ যুদ্ধ শুধু ইউরোপ নয়, পুরো বিশ্বের ওপর প্রভাব ফেলছে।
ওয়েনবিন বলেন, ‘আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই সহিষ্ণুতা দেখাবে এবং সংঘাত বৃদ্ধি রোধ করতে হবে’।
প্রসঙ্গত, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গত সোমবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্কতা জানিয়ে বলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি খুবই মারাত্মক ও বাস্তব। তাই এটাকে অবমূল্যায়ন করা যায় না।
ইউক্রেনকে আরও বেশি সামরিক সাহায্য দেয়ার প্রশ্নে ন্যাটো জোট এবং তাদের মিত্র ৪০টি দেশের মন্ত্রীরা যখন জার্মানিতে বৈঠকে বসেছে, তখন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, পশ্চিমারা ইউক্রেনের কাছে অস্ত্রের চালান পাঠালে রাশিয়া সেখানে হামলা করার অধিকার রাখে। আর এই সংঘাত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধেও রূপ নিতে পারে।
সের্গেই ল্যাভরভ পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলোকে সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনে পরমাণু যুদ্ধের হুমকি বাড়ছে এবং বিষয়টিকে ছোট করে দেখা উচিৎ নয়।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টিতে ন্যাটো এরই মধ্যে কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে পরোক্ষভাবে ‘ছায়া যুদ্ধে’ জড়িয়ে গেছে।
গতকাল রাশিয়ার জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে ল্যাভরভ জানান, ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যেকোনো চুক্তিতে যুদ্ধক্ষেত্রের চলমান পরিস্থিতি বেশ প্রভাব ফেলবে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এড়ানো কতটুকু জরুরি? এমন প্রশ্নের জবাবে ল্যাভরভ বলেন, ‘রাশিয়া যেকোনো মূল্যে পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ানোর নীতিতে স্থির থাকতে চায়। এটাই আমাদের মূল অবস্থান। এ মুহূর্তে এ ধরনের কিছু ঘটার ঝুঁকি অনেক’।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা কৃত্রিমভাবে এই ঝুঁকি বাড়াতে চাই না। অনেকেই সেরকমটা চাইবেন। এ মুহূর্তে গুরুতর ও প্রকৃত বিপদের অস্তিত্ব আছে এবং আমরা একে হালকাভাবে নিতে চাই না’।
উল্লেখ্য, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের এরকম এক আশংকার কথা প্রথম শোনা গিয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখে। ইউক্রেনের ওপর একটি নো ফ্লাই জোন আরোপের জন্য যখন নেটোর ওপর চাপ দেয়া হচ্ছিল, তখন সেটা নাকচ করে দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন, এটা করতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়াকে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে হবে, আর সেটার মানে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
এখন এই একই আশংকা শোনা যাচ্ছে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে, যখন ন্যাটো ইউক্রেনে তাদের অস্ত্রের চালান আরও বাড়াচ্ছে।
তবে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা বলছেন, লাভরভ আসলে পশ্চিমাদের ভয় দেখাতে চাইছেন, কারণ রুশরা বুঝতে পারছে তারা পরাজিত হতে যাচ্ছে।