ত্রিপুরা রাজ্যের চা শিল্প এক নতুন দিশায় এগিয়ে চলছে, জানালেন নিগমের চেয়ারম্যান

 

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৭ এপ্রিল।। রাজ্যের চায়ের কদর বহির্রাজ্যেও দিন দিন বাড়ছে। ত্রিপুরা রাজ্যের চা শিল্প এক নতুন দিশায় এগিয়ে চলছে। রাজ্যের চায়ের কদর বহির্রাজ্যেও দিন দিন বাড়ছে। কোলকাতা এবং গুয়াহাটির অকশন মার্কেটে ত্রিপুরার চা প্রতি কেজি ২৫০ টাকার অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।

রাজ্যে বর্তমানে প্রতি বছর ১০ লক্ষ কেজির মত চা পাতা উৎপাদন হচ্ছে। আজ বিকেলে পশ্চিম জেলার জেলাশাসক কার্যালয় সংলগ্ন ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন নিগমের চেয়ারম্যান সন্তোষ সাহা। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মানিক দাস।

ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সন্তোষ সাহা আরও জানান, বর্তমানে গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে চা পাতা সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি কেজি ১৫০ টাকা মূল্যে রেশনে চা পাতা পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য রাজ্য সরকার গ্রাহকদের কিছু ভর্তুর্কিও দিচ্ছে। ত্রিপুরার চা শিল্পকে জনপ্রিয় করে তুলতে বর্তমান সরকারের সময়ে ২০১৯ সালে প্রথমবারের মত ‘রান ফর টি’ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি টি বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার সাথেও চা শিল্পকে উঁচুস্তরে নিয়ে যেতে আলোচনা হয়েছে। এজন্য খুব সহসাই ‘রান ফর টি’ কর্মসূচিকে সফল করতে টি বোর্ড অফ ইন্ডিয়া ১ হাজারটি টি শার্ট প্রদানে সম্মতি জানিয়েছে।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হতে পারে। নিগমের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ১৯১৬ সালে ত্রিপুরা রাজ্যে প্রথম চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। কৈলাসহরে হীরাছড়া চা বাগান ছিল রাজ্যের ইতিহাসে প্রথম চা বাগান। এটি প্রায় ১০৫ বছরের পুরনো। ৯০ দশকের সময়কালে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার কারণে রাজ্যের চা শিল্পে বেশ প্রভাব পড়েছিল। সে সময় সন্ত্রাসবাদীদের হাতে চা বাগানের মালিক, ম্যানেজার অপহৃত হয়েছিলেন এবং তাদের অনেককেই খুন করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময়ে রাজ্যের ৬টি চা বাগান বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যার মধ্যে রয়েছে কৈলাসহরের হীড়াছড়া, সোনামুখী, নটিংছড়া ও দেবস্থল, কল্যাণপুর এবং মালাবতী চা বাগান।

তবে বর্তমান রাজ্য সরকারের তৎপরতায় বর্তমানে কৈলাসহরের চারটি চা বাগানে আংশিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। চেয়ারম্যান সন্তোষ সাহা আরও জানান, ২০১৮ সালের আগে চা শ্রমিকরা জন প্রতি নগদ মজুরি পেতেন ১০৫ টাকা। সেই জায়গায় বর্তমানে তারা পান ১৭৬ টাকা। রাজ্য সরকার আন্তরিকভাবে ত্রিপুরার চা শিল্পকে আরও উন্নত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চা শিল্পের উন্নতি হলে শ্রমিক, মালিক এবং কর্মচারিদেরও স্বার্থ রক্ষিত হবে।

এর পাশাপাশি রাজ্যের আটটি জেলার চা বাগানের শ্রমিকদের ২ গন্ডা করে জমি প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। এজন্য প্রশাসনিক আধিকারিকগণ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। খুব সহসাই শ্রমিকদের হাতে তাদের নায্য জমির পাট্টা তুলে দেওয়া হবে। ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান তথ্য দিয়ে জানান, বর্তমানে রাজ্যে ৫৪টি বড় মাপের চা বাগান রয়েছে। যার ভূমির পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার ৮০০ হেক্টরের বেশী। এর পাশাপাশি ছোট চা বাগান রয়েছে ২ হাজার ৭৫৫টি। এর ভূমির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৩৯৮ হেক্টর।সব মিলিয়ে চা বাগানগুলিতে শ্রমিকের পরিবার রয়েছে ৭ হাজার ২৩০টি।

এছাড়া দুর্গাবাড়ি এবং ব্রহ্মকুন্ড চা বাগানের আধুনিকিকরণে উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের কাছে বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেই সাথে দুর্গাবাড়ি চা বাগানে একটি আধুনিক মিউজিয়াম গড়ে তোলার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ব্রহ্মকুন্ড চা বাগানের আধুনিকিকরণে ইতিমধ্যে ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বাকি প্রকল্পগুলির জন্যও খুব সহসাই আর্থিক মঞ্জুরি পাওয়া যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?