বর্তমান রাজ্য সরকার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের পাশে রয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৭ এপ্রিল।। রাজ্যের বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবকা সাথ সবকা বিকাশ ও সরকা প্রয়াসের মন্ত্রকে পাথেয় করেই জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ সুবিধাগুলি সমাজের অন্তিম ব্যক্তির নিকট পৌঁছে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক উদ্যোগের ফলেই রাজ্য সরকার করোনা মোকাবিলা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। আজ জিরানীয়ার মোহনপুরে জিরানীয়া ব্লকভিত্তিক স্বাস্থ্যমেলার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন। উদ্বোধকের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৮ বছরের নীচে শিশু ও কিশোরীদের টিকাকরণ শুরু হওয়ার আগেই রাজ্য সরকার তাদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব সুস্থ কৈশোর অভিযান শুরু করেছিল। শিশু ও কিশোর কিশোরীদের শরীরে কৃমি দমন করা সহ ভিটামিন, আয়রন, ডায়ারিয়া নিয়ন্ত্রণ সহ ৫টি স্বাস্থ্য বিষয়কে একত্রিত করে এই অভিযান সংঘটিত করা হয়েছিল। রাজ্যের ৮টি জেলায় ১৫ দিনব্যাপী এই অভিযানে প্রায় ১৩ লক্ষ শিশু ও কিশোরীদের মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব সুস্থ কৈশোর প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে কোনও মহামারির টিকার আবিষ্কার ইউরোপীয় দেশগুলিতে হলে তা আমাদের দেশে পৌঁছতে সময় লেগে যেতো প্রায় ১০ বছর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে করোনা টিকা আবিষ্কারের ফলে দেশে করোনা অতিমারী নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। দেশের জনগণের জীবনরক্ষার পাশাপাশি প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলিকেও টিকাকরণ বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন প্রকৃত গরিব দরদি ব্যক্তি। দেশে কোভিড অতিমারীর সময়ে গরিব জনগণের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার মাধ্যমে প্রতি পরিবারে মাথাপিছু ৫ কেজি করে চাল বিনামূল্যে প্রদান করার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আদর্শকে পাথেয় করে রাজ্য সরকারও কোভিড অতিমারীর সময়ে রাজ্যের গরিব পরিবারে বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ত্রিপুরার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। রাজ্যে জলজীবন মিশনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া, উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছানো, গরিব ও অন্ত্যোদয় পরিবারে মাথাপিছু ৫ কেজি করে চাল প্রদান করা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরি করা, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা প্রদান করা ইত্যাদি সবই সম্ভব হয়েছে ত্রিপুরার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক দৃষ্টির ফলে। এইগুলির জন্য রাজ্যবাসীকে কোনও আন্দোলন করতে হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের পাশে রয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে জিবি হাসপাতালেই বর্তমানে ওপেন হার্ট সার্জারি সহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসার সুফল নিতে পারছেন রাজ্যের জনগণ। বিগত দিনে নেতিবাচক চিন্তাধারার ফলে রাজ্য অনেক পিছিয়ে পড়েছিল। বর্তমান রাজ্য সরকার আগামী ২০৪৭ সাল পর্যন্ত রাজাকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে তারও রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছে। অনুষ্ঠানে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার গঠিত হওয়ার পরই ঘোষণা দিয়েছিল যে, সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিগুলি জনগণের হাতের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। এই স্বাস্থ্য মেলার আয়োজন তারই প্রকৃত উদাহরণ।

স্বাস্থ্যমেলার মাধ্যমে জিরানীয়া ব্লক এলাকার জনগণ বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণ করার পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার সুযোগ পাবেন। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্য সরকার কৃষি থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সফলভাবে কাজ করছে। বর্তমান রাজ্য সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর প্রথমবারের মতো রাজ্যের কৃষকদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হয়েছিল। এই মরশুমেও প্রায় ২০ হাজার মেট্রিকটন ধান কৃষকদের কাছ থেকে কেনা হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর টিকাকরণ থেকে শুরু করে কোভিড মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কাজ করছে।

আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও কোভিড মোকাবিলার ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রশংসা করেছেন। স্বাস্থ্যমেলার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পগুলির সুবিধা গ্রহণের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। স্বাগত ভাষণে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন ডিরেক্টর ডা. সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল বলেন, এই ধরনের স্বাস্থ্যমেলা রাজ্যের ৫৮টি ব্লকেই আয়োজন করা হবে। ইতিমধ্যেই ৫০টি ব্লকে স্বাস্থ্যমেলার আয়োজন করা হয়েছে। এই স্বাস্থ্যমেলাগুলিতে এখন পর্যন্ত মোট ৮ হাজার মানুষ রক্তের পরীক্ষা এবং প্রায় ৩০ হাজার লোক চোখের ছানির চিকিৎসার সুযোগ গ্রহণ করেছেন।

স্বাস্থ্যমেলাগুলিতে মুখ্যমন্ত্রী মিশন দৃষ্টি প্রকল্পের সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। অনুষ্ঠান মঞ্চে সাইচ টিপে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাভিত্তিক রোশনি অভিযানের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। মুখ্যমন্ত্রী অন্ত্যোদয় শ্রদ্ধাঞ্জলি যোজনার মাধ্যমে প্রয়াত লাল মিঞার অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার জন্য তার ছেলের হাতে দুই হাজার টাকা তুলে দেন। অনুষ্ঠানে এছাড়াও ৩ জন দিব্যাঙ্গজন ব্যক্তিকে হুইল চেয়ার প্রদান করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সহ অন্যান্য অতিথিগণ তাদের এই চলন সামগ্রীগুলি তুলে দেন। স্বাস্থ্যমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এছাড়াও পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন ও জিরানীয়া পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান প্রীতম দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?