অনলাইন ডেস্ক, ২৭এপ্রিল।। মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে অনুষ্ঠিত ওই দীর্ঘ বৈঠকে একাধিক বিষয়ে কথা বলেছেন তারা। পুতিনের কাছে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং শান্তি বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। পুতিনের বক্তব্য, কয়েকটি শর্ত মেনে নিলে শান্তি বৈঠকে বসতে রাজি আছেন তিনি।
পুতিনের শর্ত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ক্রিমিয়া সমস্যার সমাধান এবং পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলো নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য জানাতে হবে ইউক্রেনকে। পুতিনের ইঙ্গিত, পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলোকে ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে। তারা স্বাধীনতা পেলেই ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি বৈঠক সম্ভব বলে জানিয়েছেন পুতিন। তবে একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, আলোচনা এখনো চলছে। কিন্তু ইউক্রেনকে রাশিয়ার ওই শর্তগুলো মেনে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নিলেও ইউক্রেন-সহ একাধিক রাষ্ট্র ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নেয়নি। এবার যুদ্ধ শুরু হওয়ার অব্যবহিত আগে দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল দুটি নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করে। দুটি অঞ্চলেই রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীরা শক্তিশালী। রাশিয়ার প্রস্তাব ওই অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে হবে ইউক্রেনকে।
জেলেনস্কির বক্তব্য
পুতিন একথা ঘোষণা করার আগেই জেলেনস্কি তার প্রাত্যহিক ভিডিওবার্তায় বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ আরো অনেকদূর পর্যন্ত গড়াবে। পূর্ব ইউরোপের আরো জায়গা দখল করার চেষ্টা করবে পুতিন। পূর্ব ইউরোপের গণতন্ত্র ভেঙে তছনছ করে দিতে চাইছে রাশিয়া। এই যুদ্ধ একা ইউক্রেনের নয়, পুরো ইউরোপের।
জেলেনস্কির বক্তব্য, পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলো কী করবে, তা স্থির হবে অবাধ গণভোটের মাধ্যমে। যুদ্ধের আবহে তা সম্ভব নয়। মানুষ যা সিদ্ধান্ত নেবে, তিনি তা মেনে নেবেন।
রাশিয়া এর আগে জানিয়েছিল, দোনেৎস্ক, লুহানস্কের মতো অঞ্চলগুলোতে গণভোটের আয়োজন করা হবে। কিন্তু ইউক্রেন জানিয়েছিল, বন্দুকের নলের সামনে গণভোট হতে পারে না। এখন ওই অঞ্চলগুলোতে গণভোটের পরিস্থিতিই নেই। রাশিয়া গণভোটের নামে কারচুপির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিল একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। এদিন জেলেনস্কি যে গণভোটের কথা বলেছেন, তা গোটা ইউক্রেনে হবে, নাকি কেবল বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলোতে, তা স্পষ্ট নয়।
জাতিসংঘের আবেদন
পুতিনের কাছে গুতেরেস বলেছেন, মারিওপলে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা মানুষকে উদ্ধারের সুযোগ করে দিতে। আজভস্টাল স্টিল প্লান্টে বহু বেসামরিক মানুষ আটকে পড়েছেন, তাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে। পুতিন জানিয়েছেন, রেডক্রস এবং জাতিসংঘের উপস্থিতিতে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব। কিন্তু একইসঙ্গে তার বক্তব্য, ইউক্রেনের সেনারা ওই বেসামরিক মানুষদের সরে যেতে দিতে চায় না। তারা তাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। বেসামরিক মানুষদের সামনে রেখে তারা রাশিয়ার সেনার সঙ্গে লড়াইয়ের চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, এখনো প্রায় এক লাখ মানুষ আটকে আছেন ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপোলে। তার মধ্যে বহু নারী এবং শিশুও আছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের প্রশাসন। শহরটি ইতিমধ্যেই রুশ হামলায় প্রায় মাটিতে মিশে গেছে। রুশ সেনারা মারিওপোলের সর্বশেষ প্রতরোধ দূর্গ আজভস্টাল ইস্পাত কারখানাটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে।
গত ২১ এপ্রিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মারিওপোলে বিজয় ঘোষণার পর শহরটির সর্বশেষ প্রতিরোধ দূর্গ আজভস্টাল ইস্পাত কারখানাকে এমনভাবে অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন, যাতে সেখান থেকে একটা মাছিও পালাতে না পারে।
প্রায় দুই মাস ধরে অবরোধের পর ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপোল শহরকে সফলভাবে মুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।