অনলাইন ডেস্ক,২১ এপ্রিল।। ইউক্রেনে হামলার পর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া রাশিয়ান ধনকুবের ওলেগ টিনকভ তার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে রুশ সেনাদের ‘হত্যাযজ্ঞের’ নিন্দা করেছেন এবং এই ‘পাগলাটে’ সংঘাতের অবসান ঘটাতে সাহায্য করার জন্য পশ্চিমা নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
৫৪ বছর বয়সী ওলেগ টিনকভ মঙ্গলবার ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে দাবি করেন যে, তার দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিল।
ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে রাশিয়ান ধনকুবেরদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে তীব্র সমালোচনা করলেন।
রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী টিনকফ ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা টিনকভ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার দেশের বাইরেই অবস্থান করছিলেন।
ইনস্টাগ্রাম পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমি এই পাগলাটে যুদ্ধের কোনো লাভ দেখছি না! নিরপরাধ মানুষ এবং সৈন্যরা মারা যাচ্ছে’। তিনি পুতিনকে সম্মানজনকভাবে ইউক্রেন থেকে বেরিয়ে আসার একটি পথ করে দেওয়ার জন্যও পশ্চিমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলার নির্দেশ দেওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এমনকি রাশিয়াতেও বিক্ষোভ হয়। ওই বিক্ষোভ দমনের জন্য পুতিন একটি কঠোর আইন তৈরি করেন। ওই আইনে দেশের সামরিক বাহিনী সম্পর্কে ‘ভুয়া খবর’ প্রচার এবং প্রকাশ করার জন্য ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন আজ ৫৬তম দিনে গড়িয়েছে। এতে প্রায় ১ কোটি বিশ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ায় দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট দেখা দিয়েছে।
ইউক্রেনে হামলার পরপরই রাশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানি এবং ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পশ্চিমা বিশ্ব। ওলেগ টিনকভও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছেন। রাশিয়ার বেশ কয়েকজন ধনকুবের যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে অনেকেই আবার পুতিনকে সমর্থন দিয়েছেন।
টিনকভ লিখেছেন, ‘অবশ্যই এমন মূর্খ আছে যারা এই যুদ্ধে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু তারা দেশের মাত্র ১০%। ৯০% রাশিয়ান এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে!’ পুতিন বা ক্রেমলিনের সঙ্গে তার কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কথাও অস্বীকার করেছেন টিনকভ।
তিনি বলেন, ‘ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা হতবাক যে তারা বা তাদের সন্তানদের কেউই গ্রীষ্মে ভূমধ্যসাগরে যাবে না। ব্যবসায়ীরা তাদের বাকি সম্পত্তি বাঁচানোর চেষ্টা করছেন’।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ছেড়ে চলে আসার পর ইউক্রেনের পূর্ব ডনবাস অঞ্চল দখল করার জন্য রুশ বাহিনী নতুন করে আক্রমণ শুরু করার সময় এই রুশ ধনকুবের মুখ খুললেন।
কঠোর প্রতিরোধের মুখে ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চল থেকে সরে এসে রাশিয়ান সেনারা এখন দেশটির পূর্বাঞ্চলের ডনবাসকে (লুহানস্ক, দোনেতস্ক) মুক্ত করার জন্য হামলা শুরু করেছে।
টিনকভ বলেন যে, রাশিয়ান ‘জেনারেলরা, দিবাস্বপ্ন থেকে জেগে উঠেছে’, এখন বুঝতে পেরেছে যে তাদের একটি ‘ফালতু সেনাবাহিনী’ ছিল।
তিনি বলেন, ‘আর যে দেশের অন্য সব কিছুই খারাপ, যে দেশ স্বজনপ্রীতি, চাটুকারিতা এবং দাসত্বে নিমজ্জিত থাকে তার সেনাবাহিনী কীভাবে ভাল হতে পারে?’
এরপর তিনি ইংরেজিতে লিখেছেন, ‘প্রিয় ‘সম্মিলিত পশ্চিম’ অনুগ্রহ করে পুতিনকে তার মুখ বাঁচাতে এবং এই গণহত্যা বন্ধ করার জন্য সম্মানজনকভাবে সরে আসার রাস্তা করে দিন। অনুগ্রহ করে আরও যুক্তিবাদী এবং মানবিক হউন’।
সাইপ্রাস-ভিত্তিক টিসিএস গ্রুপ হোল্ডিং-এর প্রায় ৩৫ শতাংশের মালিক টিনকভ। যার অধীনে ব্যাংকিং এবং বীমা থেকে মোবাইল পরিষেবা কম্পানি পর্যন্ত রয়েছে।
এ বছর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে। এর আগে টিনকভ ২০২০ সালে টিনকফ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
এক বিবৃতিতে ব্যাঙ্কটি বলেছে যে, তারা টিনকভের ‘ব্যক্তিগত মতামত’ সম্পর্কে মন্তব্য করবে না। তারা আরও জানিয়েছে যে, টিনকভ আর টিনকফ ব্যাংকের অপারেশন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেন না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘তিনি টিনকফের কর্মচারী নন, দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ায় ছিলেন না এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূলত স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন’।