।। চৈত্র সংক্রান্তি।।
বসন্তের বিদায়ে গ্রীষ্মের সূচনা। এমন এক দিন প্রাচীনকাল থেকে বাংলার বুকে এক অপরিসীম তাৎপর্য বহন করছে। চৈত্র শেষে বৈশাখের আগমনে পালিত হয় চৈত্র সংক্রান্তি। চৈত্র মাস মানেই মেলা আর উৎসবের ফুলঝুরি। আর নতুন বাংলা বর্ষ আসার প্রতীক্ষা। চৈত্র মাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় দিনটি হল চৈত্র সংক্রান্তি। এই দিনটিকে অবলম্বন করে বাংলার বুকে রয়েছে একাধিক লোকাচার থেকে পূজা-আর্চা এবং সামাজিক বিধি। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে গ্রাম-বাংলার বউ-ঝিরা ঝোপ-জঙ্গল থেকে প্রথা মেনে ১৪ রকমের শাক তুলে আনতেন। সেই শাক একসঙ্গে রেঁধে এই দিনে খাওয়া হয়। এই প্রথা শাকান্ন উৎসব নামে পরিচিত। কোথাও কোথাও চৈত্র সংক্রান্তির দিনে নিরামিশ খাওয়ার প্রথা রয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেকেই একটি তেতো পদ রান্না করেন।
এমন এক দিনে পুরনো পরম্পরা মেনে গাজন, নীলপুজো ইত্যাদি পালিত হয়। চৈত্রসংক্রান্তির প্রধান উৎসব চড়ক। লাল কাপড় পরে মাথায় পাগড়ি বেঁধে, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা এবং হাতে ত্রিশূল নিয়ে শিবের সাজ, সঙ্গে আবার দেবী পার্বতীর সাজে কেউ একজন, এদের সঙ্গে আবার খোল-করতাল, ঢাক-ঢোল নিয়ে কিছু জন ঘুরে বেড়ায়। সংক্রান্তির আগে পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি ঘুরে শিব-গৌরী নাচ দেখিয়ে ভিক্ষে করে চড়ক মেলার প্রচার করে থাকে। তারপর চৈত্র সংক্রান্তি তে অনুষ্ঠিত হয় এই চড়ক মেলা। পুরান মতে কথিত আছে চৈত্র সংক্রান্তির পূন্য লগ্নেই শিব ও কালীর মিলন হয়েছিল, তাই এই দিন শৈব ভক্তরা ও শক্তি উপাসকরা শিব-শক্তির উপাসনায় মাতেন। এটিকেই চড়ক পূজা বলা হয়।
চৈত্র সংক্রান্তিতে আরও একটি বিশেষ পরব অনুষ্ঠিত হয়। এর নাম বিজু বা বৈসাবি। এই নামকরণের পিছনেও রয়েছে এক ইতিহাস। কারণ, বৈসাবি নামের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ত্রিপুরার বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের বিজু উৎসব। এই উৎসবের আদ্যাক্ষরগুলো নিয়ে তৈরি হয়েছে বৈসাবি। তবে, বিজু বা বৈসাবী পালিত হয় দুদিন ধরে। চৈত্র সংক্রান্তি এবং পয়লা বৈশাখ নিয়ে এই উৎসব। এছাড়াও চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন হয় ফুল বিজু উৎসব। ওই দিনে চাকমা মেয়েরা পাহাড়ে যায় ফুল সংগ্রহ করতে। সংগ্রহ করা ফুলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এক ভাগ দিয়ে বুদ্ধদেবকে পূজা করা হয়। এক ভাগ জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয় এবং বাকি এক ভাগ দিয়ে ঘর সাজানো হয়। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে পালিত হয় মূল বিজু। এই দিন সকালে বুদ্ধদেবের মূর্তিকে স্নান করানো হয়। জুম চাষের প্রস্তুতি হিসেবেই বিজু উৎসব।
বসন্তকে বিদায় দিয়ে বাঙালি বরণ করবে গ্রীষ্মকাল। চলছে তার প্রস্তুতি। নববর্ষে নতুন জামাকাপড় পরার রীতি আছে বলে গোটা চৈত্র মাস জুড়ে চলে কেনাকাটা। সেজন্যেই বিভিন্ন দোকান-পাঠে থাকে বিশেষ ছাড়। তাছাড়াও নববর্ষের পূর্বে বাড়ি-ঘর, দোকান-পাঠ ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করা হয় নতুন বছর বরণের উদ্দেশ্যে। চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকলে বরণ করে নতুন বছরকে।