অনলাইন ডেস্ক,৯ এপ্রিল।। আবারও ভারতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গতকাল শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ভারতের প্রশংসা করে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ভারতের প্রশংসা করি… তাদের সবসময়ই স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি ছিল।
তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তান একই সময়ে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। আজ পাকিস্তানকে টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলা হয়।
অথচ কোনো পরাশক্তির সাহস নেই ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলার।
ইমরান খান বলেন, আমি ভারতকে অন্যদের চেয়ে বেশি চিনি। সেখানে আমার বন্ধু রয়েছে এবং আমি খুবই দুঃখিত যে, আরএসএসের কারণে এবং কাশ্মীরে তারা যা করে সে জন্য তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। ভারতীয়রা খুবই আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন। কেউ তাদের নির্দেশ দিতে পারে না।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো স্বাগত জানালেও এতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তার সমালোচকেরা। ইমরানের সাবেক স্ত্রী রেহাম খান টুইটারে বলেছেন, ভোটে আবার জিততে পারবেন না জেনেই কি তিনি (ইমরান) ভারতের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেছেন? হঠাৎ করেই ‘আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন’!
বিরোধী দল পিএমএল-এন নেতা মরিয়ম নওয়াজ শরীফ বলেছেন, ইমরান খান যদি ভারতকে এতই পছন্দ করেন, তাহলে তার সেখানে স্থানান্তরিত হওয়া উচিত।
এর আগে, গত মাসে খাইবার পাখতুনখাওয়ার এক উন্মুক্ত জনসমাবেশে ভারত ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গে অনেক ইতিবাচক কথা বলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি আমাদের প্রতিবেশী হিন্দুস্তানের বৈদেশিক নীতির প্রশংসা করতে চাই।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি মুক্ত ও স্বাধীন এবং এর একমাত্র লক্ষ্য, নিজের জনগণের উন্নতি করা।
সেদিন হাজার হাজার সমর্থকের সামনে প্রধানমন্ত্রীকে ভারতের প্রশংসা করতে দেখে অবাক হয়েছেন পাকিস্তানের অনেক নেতাই। কারণ এই ইমরান খানই একসময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নরেন্দ্র মোদীকে ‘হিটলার’ ও ‘নাৎসি নেতা’ বলে উপহাস করতেন। সেই তিনিই এমন সময়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করছেন, যখন তার সরকার পতনের দ্বারপ্রান্তে।
কিন্তু কেন তিনি ভারতের এমন প্রশংসা করছেন? পাকিস্তানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট শুরুর পর থেকেই ভারত ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে পুরোনো অবস্থান বদলে ফেলেন ইমরান খান।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতই একমাত্র কোয়াড জোটভুক্ত দেশ যা ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়া এবং তার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে স্পষ্টভাবে নিন্দা করেনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট চলাকালীন ভারতই একমাত্র কোয়াড দেশ যারা ভোট দেয়নি। অন্যদিকে, ইমরান খান রাশিয়া সফর করছিলেন এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি যেদিন রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনে একটি ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ আক্রমণ করেছিল সেদিন পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। মোদী সরকারের এই ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানের প্রশংসা করে ইমরান খানের বিবৃতি একভাবে তার রাশিয়াপন্থী অবস্থান এবং মনোভাব পরিদর্শনের চেষ্টা বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার টানাপোড়েন চলছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, বেনজির ভুট্টো, ইউসুফ রাজা গিলানিও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলেই ভারতের প্রশংসা করেছেন এবং ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চেয়েছেন।
ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা না থাকা নিয়ে চরম রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে পাকিস্তান। ইমরানের দাবি, তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ ও বিদেশিরা এক হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন ইমরানসহ অনেকেই।
এমনকি রাশিয়া অভিযোগ করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ‘অবাধ্য’ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে শাস্তি দিতে চেয়েছে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইমরান খানের বিরোধীদের অর্থায়ন করে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে তার সরকার পতনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইমরান খানের বিরোধীদের দাবি, ২০১৮ সালে সামরিক বাহিনীর সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছেন ইমরান। এখন তাঁর মাথার ওপর থেকে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ছায়া সরে গেছে। যদিও কোনো পক্ষই বিষয়টি স্বীকার করে না।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে দেশটির সামরিক বাহিনীর সংঘাতের এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের ইতিহাসের প্রায় অর্ধেক সময় শাসন করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। ইমরান খান ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর দুর্নীতি ও পক্ষপাতমুক্ত একটি ‘নতুন পাকিস্তান’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেনাবাহিনীর খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছেন।
পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে কোনও প্রধানমন্ত্রীই নিজেদের ক্ষমতার পাঁচ বছরের পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে পারেননি। কখনও খুন হয়ে, আবার কখনও বিরোধীদের অনাস্থার মুখে পড়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীদের।