শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে পৌঁছালো মার্কিন ডলার

অনলাইন ডেস্ক, ৮ এপ্রিল।। নজিরবিহীন আর্থিক সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে পৌঁছালো মার্কিন ডলার। শ্রীলঙ্কান মুদ্রার ধারাবাহিক দরপতনে দেশটিতে এখন এক ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩২০ রুপিতে।

লঙ্কান সংবাদমাধ্যম সিলন ডেইলির খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) শ্রীলঙ্কায় এক মার্কিন ডলার বিক্রি হচ্ছে ৩১৯ দশমিক ৯৯ রুপির বিনিময়ে, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

লঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, মুদ্রার ব্যাপক দরপতনের কারণে তারা এক মার্কিন ডলার কিনছে ৩০৯ দশমিক ৩৮ রুপিতে ও বিক্রি করছে ৩১৯ দশমিক ৯৯ রুপিতে।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে ভুগছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। দেশটির চারদিকে এখন শুধুই হাহাকার। খাবারের দাম আকাশচুম্বী। চলছে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট। তেল সংগ্রহের জন্য হাজার-হাজার মানুষ লাইনে ভিড় করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পেট্রল পাম্পগুলোতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে লঙ্কান সরকার।

কাগজের অভাবে স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে শ্রীলঙ্কা। কারণ, কাগজ আমদানির মতো বৈদেশিক মুদ্রা তাদের কাছে নেই। বিদেশি ঋণের ভারে আজ জর্জরিত দ্বীপরাষ্ট্রটি। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় ঠেকেছে, তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয়ও মেটাতে পারছে না। যার ফলে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। চালের দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ২২০ রুপি। বিদ্যুৎ না থাকায় কেরোসিনের বাতি, কাঠ কয়লার ইস্ত্রি মেশিনে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন লঙ্কানরা।

চরম অর্থসংকটের মুখে ক্ষুব্ধ জনগণ লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবি করছে। রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। পরিস্থিতি সামলাতে কারফিউ জারি করতে হয়েছে লঙ্কান সরকারকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্রীলঙ্কার এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বহু বছর ধরে একের পর এক অলাভজনক মেগা প্রকল্পে অর্থায়ন আর অদূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই এমন ঘোর বিপদে পড়েছে দক্ষিণ এশীয় দেশটি।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়; কিন্তু দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এতটাই কমেছে যে, তা দিয়ে এক মাসের আমদানি ব্যয়ও মেটানো যাবে না। বিদেশি মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে শ্রীলঙ্কায়।

মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকায় দেশটিতে হু হু করে বাড়ছে খাদ্য-ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না দেশটি, ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শ্রীলঙ্কার গণপরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা।

বিদ্যুৎ-খাদ্য-ওষুধ-জ্বালানি সংকটে অতিষ্ঠ শ্রীলঙ্কার জনগণ গত কিছু দিন ধরে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন, এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে কলম্বোসহ দেশের সব বড় শহরে আন্দোলন শুরু করেছেন তারা। জনরোষ সামাল দিতে শনিবার দেশজুড়ে তিন দিনের কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয় দেশটির সরকার।

কারফিউয়ের দ্বিতীয় দিন, রবিবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ব্যাতীত ২৬ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভার সবাই একযোগে পদত্যাগ করেন। একই দিন পদত্যাগ করেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরও।

তারপর ০৬ এপ্রিল পদত্যাগ করেন গোতাবায়ার নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে এমপিরা। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তত ৪১ জন এমপি মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

তবে আন্দোলনরত জনগণ এতে সন্তুষ্ট নন। তারা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ও তার বড়ভাই প্রধানমন্ত্রী মহিন্দারও পদত্যাগ চাইছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট জাতীয় ঐক্যের সরকারে যোগ দেয়ার জন্য বিরোধী এমপিদের আহ্বান জানালেও তারা সেটি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, প্রেসিডেন্টসহ পুরো সরকারকেই পদত্যাগ করতে হবে।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?