।। রাজীব চক্রবর্তী।। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তায় এখন রাজ্যেই খুলে যাচ্ছে রোজগারের নয়া দিগন্ত। তৈরি হয়েছে আত্মনির্ভরতার মানসিকতা। শিল্প উদ্যোগ স্থাপনে রাজ্য সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে বর্তমানে স্টার্ট আপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছোট শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে যুব উদ্যোগীরা কেবল নিজেরাই স্বাবলম্বী হচ্ছেন না তৈরি করছেন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও। একে কাজে লাগিয়েই নানা উদ্ভাবনী পন্থায় চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে রাজ্যের অনেক উদ্যোগীরাই আত্মনির্ভরতার পথ খুঁজে পেয়েছেন। তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন পূরণে গতি সঞ্চার করছে প্রধানমন্ত্রী কর্মসৃজন প্রকল্প। এই প্রকল্পে প্রাপ্ত ঋণের সহায়তায় লাঘব হয়েছে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা। সরকারি চাকরির মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে কিছু করার অদম্য জেদ আর ইচ্ছাশক্তিকে সম্বল করে যুব উদ্যোগী লক্ষ্মণ দাস নিজে স্বনির্ভর হয়ে আজ অন্যদেরও রোজগারের সংস্থান করছেন। বিকল্প কিছু করে আত্মনির্ভর হয়ে উঠার তাগিদ তাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করত। রোজগারের বিভিন্ন পরিকল্পনা থাকলেও বাদ সাধে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা। কিভাবে অর্থের সংস্থান করবেন সঠিক পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। রাণীরবাজারের যুব উদ্যোগী লক্ষ্মণ দাসের সাধ আর সাধ্যের ফারাক মিটিয়ে দিলো খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদ।নিজে থেকে খোঁজ করে জানতে পারলেন রাজ্যে প্রাণী খাদ্য তৈরি করে স্বাবলম্বী হওয়ার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সিদ্ধান্ত নিলেন ছোট পরিসরে প্রাণী খাদ্য তৈরি করার। কিভাবে তৈরি করবেন কোথায় পাবেন প্রশিক্ষণ এসব নানা প্রশ্ন তাকে তাড়া করে বেড়াতো। খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের সহায়তায় প্রাণী খাদ্য তৈরির প্রশিক্ষণ নেন ইন্দ্রনগরে। প্রাথমিকভাবে ছোট পরিসরে মাছ ও প্রাণী খাদ্য তৈরি করেন। লক্ষ্মণ দাস জানান, পর্ষদের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী কর্মসৃজন প্রকল্পের ১০ লক্ষ টাকার ঋণ পেলেও পশুখাদ্য তৈরির জন্য কাঁচামাল কেনা সহ বিভিন্ন খরচ মিলিয়ে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন। ব্যবসার সুযোগ থাকলেও মূলধনের অভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছিলো। তার এখানেই কাজের সুযোগ হয় আরও পাঁচ জনের। প্রথম ঋণের টাকা মিটিয়ে দিয়ে ৩৫ শতাংশ ভর্তুকি পান তিনি।
প্রাণী খাদ্য তৈরির এই ব্যবসাকে আরও বড় পরিসরে করার লক্ষ্যে ২০২০ সালে জিরানীয়া আরডি ব্লকের মাধ্যমে খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদে এক কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন লক্ষ্মণ দাস। অল্প সময়ের মধ্যেই পর্ষদ থেকে একটি প্রতিনিধিদল পরিদর্শনে আসে। পর্ষদ থেকে মিলে সবুজ সংকেত। এতেই ঘুরে যায় লক্ষ্মণ দাসের ভাগ্যের চাকা। খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের সহায়তায় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে এক কোটি টাকার ঋণ পেয়ে যান রাণীরবাজারের যুব উদ্যোগী লক্ষ্মণ দাস। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই ঋণের সহায়তায় শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হননি তার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রতিদিন ১০-১৫ জন কর্মচারী কাজ করছেন। কথা প্রসঙ্গে লক্ষ্মণ দাস জানালেন, কর্মচারীদের বেতন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি মাসে আমার ৩০ ৪০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের চেয়ারম্যান রাজীব ভট্টাচার্য জানান, উৎপাদনমূলক উদ্যোগের জন্য প্রধানমন্ত্রী কর্মসৃজন প্রকল্পে ঋণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তিনি জানান, এই ধরনের উদ্যোগের জন্য সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১ থেকে সর্বাধিক ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। ২০১৮-১৯ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত করোনার প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মোট ৪৭৪ জন যুব উদ্যোগীকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ঋণের ব্যবস্থাই নয় তাদের উৎপাদিত পণ্য সঠিক বাজার পাচ্ছে কিনা সেই বিষয়েও সজাগ দৃষ্টি রাখছে খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্যদ। এমনকি সরকারি ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী কর্মসৃজন প্রকল্পের অন্তর্গত ভাগীদের উৎপাদিত পণ্যের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছে পর্ষদ। কোনও আবেদনকারীকে যেন ঋণের জন্য বেগ পেতে না হয় সেই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছে পর্ষদ।