৷৷ তিলক রবিদাস ।। উন্নয়নের প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলিই গ্রামীণ অর্থনীতির বুনিয়াদ সুদৃঢ় করে। বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় এসেই উন্নয়নের প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলি যেমন কৃষি, উদ্যান, বন, মৎস্যচাষ ও প্রাণীপালনের মধ্য দিয়ে আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ে তোলার প্রয়াস নিয়েছে। সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলস্বরূপ রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীদের মধ্যে স্বনির্ভর হয়ে উঠার মানসিকতা গড়ে উঠেছে। এরফলে যেমন রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে গতি সঞ্চার হয়েছে তেমনি রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার বেকার যুবক যুবতীরা স্বরোজগারী হয়ে উঠছে। এই স্বরোজগারী যুবক যুবতীরাই আবার কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করছেন। এমনই এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পশ্চিম ভুবনবনের বিশ্বজিত দত্ত।
মাছের রেণু ও মাছের পোনা উৎপাদন করে বিশ্বজিত আজ স্বনির্ভর। রাজ্য সরকার মৎস্যচাষের ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় বছর ৪০-এর বিশ্বজিত দত্তের স্বপ্ন দেখা শুরু। তিনি বিকল্প আয়ের খুঁজে নিয়েছেন। মাছ উৎপাদনের জন্য চাই প্রচুর রেণু থেকে পোনা উৎপাদন করা হয়। তাই বিশ্বজিত দত্ত স্বনির্ভর হয়ে উঠার জন্য বেছে নিলেন মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদনের কাজ। প্রথমে তিনি নিজের বাড়িতে খাঁকি ক্যাম্বেল হাঁস ও মোরগ পালনের কাজ শুরু করেন। পরে ২০১৯ সাল নাগাদ তিনি মৎস্য দপ্তরের পরামর্শে নিজের বসতবাড়ির পুকুরেই মাছ চাষ শুরু করেন। তার উৎসাহ দেখে মৎস্য দপ্তর থেকে তাকে মাছের হ্যাচারি করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
২০২০ সালে মৎস্য দপ্তর হায়দ্রাবাদস্থিত ন্যাশনাল ফিস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে মাছের হ্যাচারি করার জন্য রাজ্য সরকার ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়।এই সহায়তা পেয়ে বিশ্বজিত দত্ত নিজের জমিতেই আশীর্বাদ অ্যাকুয়া ইউনিট নামে একটি হ্যাচারি গড়ে তোলেন। এই হ্যাচারিতে এখন ১৭টি ট্যাঙ্ক রয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে পাবদা, ভিয়েতনামের কই, ট্যাংরা, শিশু ও মাগুর মাছের রেণু। এই রেণুগুলি থেকেই মাছের পোনা উৎপাদিত হচ্ছে। বিশ্বজিত দত্তের হ্যাচারিতে এখন বিভিন্ন মাছের ১৫ লক্ষ পোনা রয়েছে।
কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, প্রতি মাসেই মাছের রেণু ও পোনা বিক্রি করে ৫০-৬০ হাজার রোজগার হচ্ছে। হ্যাচারিতে মাছের ডিম থেকে রেণু বের হওয়ার ৪-৫ দিন পর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত এবং প্রতিবেশি রাজ্য আসাম থেকেও পাইকারি পোনা বিক্রেতারা আমার হ্যাচারি থেকে পোনা ক্রয় করেন। এই রোজগার আমার সংসারে হাসি ফুটিয়েছে। এক সময় যে অভাব অনটন ছিল তা আর এখন নেই। আমি এখন স্বনির্ভর। চার-পাঁচ বছর আগের বেকার বিশ্বজিত দত্ত এভাবেই স্বনির্ভর হয়ে উঠলেন। তিনি শুধু স্বনির্ভরই হননি আরও অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন তার হ্যাচারিতে।
মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদনের আয় থেকে বিশ্বজিত দত্ত মাছ চাষের জন্য আরও ৫টি জলাশয় তৈরি করেছেন। প্রতিটি জলাশয়ে ৪০-৫০ হাজার টাকার মাছ রয়েছে। এই জলাশয়গুলির মাছ আগরতলা শহর ও শহর উপকন্ঠের বাজারগুলিতে বিক্রি হয়। তার হ্যাচারির খবর পৌঁছে গেছে বহিরাজা এমনকি বিদেশের মৎস্য বিজ্ঞানীদের কাছেও। হ্যাচারি পরিদর্শনের জন্য ভুটান, নেপাল, মুম্বাই, অন্ধ্রপ্রদেশ, কলকাতা, ওড়িশা, দেরাদুন ও মণিপুর থেকে মৎসা বিজ্ঞানীরা নিয়মিত আসেন। বিশ্বজিত দত্ত এখন এই রাজ্যের গর্ব। অন্য অনেকের অনুপ্রেরণাও।