।। নীতা সরকার।। গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে প্রাণীপালন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আসছে। রাজ্য সরকারও প্রাণীপালনের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার পরিবারগুলিকে স্বনির্ভর করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় রাজ্যে যে আত্মনির্ভরতার মানসিকতা গড়ে উঠেছে তার অন্যতম নিদর্শন জিরানীয়া ব্লকের চন্দ্রসাধু পাড়ার রঞ্জিত দাস।
পূর্ব দেবেন্দ্রনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের চন্দ্রসাধু পাড়ায় রঞ্জিত দাসের বাড়ি। গাভী পালন করে রঞ্জিত দাস এখন স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন। এক্ষেত্রে আশার আলো দেখিয়েছে ‘মুখ্যমন্ত্রী উন্নত গোধন প্রকল্প’। রঞ্জিত দাস বসতবাড়িতেই গাভী পালন শুরু করেছেন ২০১৮ সাল থেকে। নিজের বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন গাভী খামার। গাভীর সুষম খাদ্যের জন্য তিনি ১২ কানি জমিতে ঘাস চাষও শুরু করেন। রঞ্জিত দাস জানালেন, ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে তাদের গৃহপালিত প্রাণীদের যত্ন নিতেন। সেই থেকেই গাভী পালন করে আত্মনির্ভর হয়ে উঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। বাবার একটি সংকরজাতীয় গাভী পালনের মধ্য দিয়ে তার গাভী খামারের সূচনা হয়। তখনই গাভীর সুষম খাদ্যের জন্য তিনি জিরানীয়া প্রাণীসম্পদ বিকাশ কার্যালয়ের সহায়তায় প্রশিক্ষণ নিয়ে সবুজ ঘাস চাষ শুরু করেন। ২০১৯ সালে আরও বড় পরিসরে গাভী খামার গড়ে তোলার জন্য চম্পকনগর গ্রামীণ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেন। ঋণের অর্থে তিনি ৬টি উন্নত প্রজাতির গাভী ক্রয় করেন।
কথা প্রসঙ্গে রঞ্জিত বাবু জানালেন, সরকারি চাকরির মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেকে গাভী পালনের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর হয়ে উঠার কাজ শুরু করি। ঋণ পেতে আমাকে প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের জিরানীয়া কার্যালয় থেকে সহায়তা করা হয়েছে। খামারে এখন ১০টি উন্নত প্রজাতির গাভী রয়েছে। এরমধ্যে ৪টি গাভী গর্ভবতী। মুখ্যমন্ত্রী উন্নত গোধন প্রকল্পে সেক্স সর্টেড সিমেনের মাধ্যমে গাভীদের কৃত্রিম প্রজনন করা হয়েছে। রাজ্যে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেক্স সর্টেড সিমেন দ্বারা স্ত্রী বাছুরের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবর্ষে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় এই পদ্ধতিতে ২৮ হাজার ২৫২টি গাভীর কৃত্রিম প্রজনন করা হয়েছে। এই প্রয়াসেরই এক সফল রূপকার চন্দ্রসাধু পাড়ার রঞ্জিত দাস। তার গাভী খামারে এখন ৪টি গাভী দুধ দিচ্ছে। এই গাভীদের থেকে তিনি দৈনিক ২৫-৩০ লিটার দুধ পান। তিনি গোমতী ডেয়ারি ও বোধজংনগরস্থিত মাদার ন্যাচার ডেয়ারির কাছে ৪৫ টাকা লিটারে দুধ বিক্রি করেন।
পাশাপাশি তিনি সুষম গোখাদ্য ঘাস ও ঘাসের কাটিংও বিক্রি করেন। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে তার এখন ৩০-৩৫ হাজার টাকা রোজগার হচ্ছে। তার রোজগার এখন সংসারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। স্বনির্ভর রঞ্জিত দাস এখন অন্যের কাছেও এক দৃষ্টান্ত।