‘অবাধ্য’ ইমরান খানকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক,৫ এপ্রিল।। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘নির্লজ্জভাবে হস্তক্ষেপ’ করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে এর নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘অবাধ্য’ ইমরান খানকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

এক বিবৃতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এই অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ইমরান খান গত ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ায় কার্যনির্বাহী সফরের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা সহযোগীরা পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর উপর এই সফর বাতিল করার জন্য অভদ্রভাবে চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করে’।

‘কিন্তু ইমারান খান সেই চাপ উপেক্ষা করেই আমাদের কাছে এসেছিলেন। এরপর পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে ওয়াশিংটনে ডেকে পাঠানো হয় এবং অবিলম্বে সফরটি স্থগিত করার দাবি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সেই দাবিও প্রত্যাখ্যান করা হয়’।

জাখারোভা বলেন, ‘পাকিস্তানের মিডিয়ার খবর অনুসারে, গত ৭ মার্চ পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদের সঙ্গে এক কথোপকথনে ডোনাল্ড লু নামের একজন উচ্চপদস্থ আমেরিকান কর্মকর্তা ইউক্রেনের ঘটনায় পাকিস্তানি নেতৃত্বের ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার তীব্র নিন্দা জানান এবং স্পষ্ট করে দেন যে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিলেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক সম্ভব’।

মারিয়া জাখারোভা বলেন, পাকিস্তানের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ থেকে প্রমাণ হয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘অবাধ্য ইমরান খানকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’। যুক্তরাষ্ট্র ইমরান খানের দল পিটিআই-এর ভেতর থেকেই সংসদ সদস্যদেরকে টাকার বিনিময়ে বিরোধীদের পক্ষে নিয়ে যায় এবং অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করে।

জাখারোভা বলেন, ‘এটি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিজের স্বার্থপরতার জন্য নির্লজ্জ মার্কিন হস্তক্ষেপের আরেকটি প্রয়াস। উপরোক্ত তথ্যগুলো থেকেই বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়’।

জাখারোভা আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিজে বারবার বলেছেন যে, তার বিরুদ্ধে বিদেশি একটি রাষ্ট্র থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা আশা করি যে, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগেই পাকিস্তানের ভোটাররা এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে যাবে’।

ইমরান খান গত মাসে ইসলামাবাদের একটি জনসভায় অভিযোগ করেছিলেন যে, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু তাকে একটি চিঠিতে ‘হুমকিপূর্ণ মন্তব্য’ করেছেন।

গত মাসে পাকিস্তানের সব বিভাগের প্রধানদের নিয়ে গঠিত ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি চিঠিটির বিরুদ্ধে একটি ‘শক্তিশালী প্রতিবাদ’ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এবং একে ‘পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্পষ্ট হস্তক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছে।

ইমরান অভিযোগ করেছেন যে, তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ‘বিদেশী ষড়যন্ত্রের’ অংশ।

তবে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে ‘হুমকি’ দেওয়া মার্কিন কূটনীতিক ডোনাল্ড লুকে পাকিস্তানে শাসক পরিবর্তন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।

সাক্ষাৎকারে তাকে ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার কথোপকথন সম্পর্কে একটি প্রশ্নে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘ইমরান খান বলেছেন, আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথোপকথনের সময় তাকে বলেছিলেন যে, ইমরান খান যদি অনাস্থা থেকে বেঁচে যায় তাহলে পাকিস্তান সমস্যায় পড়ে যাবে এবং যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে ক্ষমা করবে না। এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?’

ডোনাল্ড লু এই প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের ঘটনাপ্রবাহের ওপর নজর রাখছি এবং আমরা পাকিস্তানের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া এবং আইনের শাসনকে সম্মান ও সমর্থন করি’।

তিনি এই ধরনের কথোপকথন করেছেন কিনা ফের তা জানতে চাইলে, ডোনাল্ড লু আবারও প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘এই প্রশ্নে আপনার জন্য আমার কাছে শুধু এতটুকু উত্তরই আছে’। তিনি এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলেন নি।

গত ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে দেন এই বলে যে, ‘পরিস্থিতি থেকে প্রমাণিত হয় যে, এই অনাস্থা প্রস্তাব, বিদেশী হস্তক্ষেপ এবং পাকিস্তানে নিযুক্ত বিদেশি প্রতিনিধিদের কার্যকলাপের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে’।

ইমরান ফেব্রুয়ারিতে দুই দিনের সফরে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে গিয়েছিলেন মূলত জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করতে। কিন্তু তার এই সফর নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অসন্তুষ্ট হয়েছিল, কারণ তা এমন এক সময়ে হয়েছে যখন রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করতে যাচ্ছে।

সেই সময়ে ইমরান খানের সরকার বলেছিল যে, এই সফরে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে, যার দিন-তারিখ কয়েক মাস আগেই নির্ধারিত করা হয়েছিল।

সফরের সময় ইমরান খান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেছিলেন যে, তিনি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং ইসলামাবাদ আশা করেছিল যে, কূটনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে সামরিক সংঘাত এড়ানো হবে।

ইমরান খান জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, সংঘাত কারও জন্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে না। আর যুদ্ধ হলে উন্নয়নশীল দেশগুলোই অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

দুই নেতার মধ্যে বৈঠকের পর জারি করা একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমেই বিরোধের সমাধান করা উচিত, রাশিয়ার নেতাও পাকিস্তানের এই বিশ্বাসের প্রতি জোর সমর্থন জানিয়েছেন’।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?