স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৫ এপ্রিল।। আগামী বছরের প্রতীক্ষার মধ্য দিয়ে হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে আজ সমাপ্ত হলো ১২দিনব্যাপী ৪০তম আগরতলা বইমেলা। উল্লেখ্য, মেধা ও মননের উৎসব বলে পরিচিত আগরতলা বইমেলা গত ২৫ মার্চ থেকে শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যার পরিসমাপ্তি ঘটলো আজ।
প্রত্যেক বারের মতো এবারও বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য রাজ্যের প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বদের বইমেলার মঞ্চে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। শিক্ষা সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের বিকাশে অবদানের জন্য এবছর মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে চিত্তরঞ্জন দেববর্মাকে (স্বামী চিত্তরঞ্জন মহারাজ)।
পুরস্কার হিসেবে উত্তরীয়, স্মারক, মানপত্র দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য অটল বিহারী বাজপেয়ী আজীবন স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সম্পাদক সঞ্জীব দেব। সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় জাতীয় সংহতি পুরস্কার পেয়েছেন ডঃ মনোজ কান্তি দেবরায়। এই তিনজনকেই উত্তরীয়, স্মারক, মানপত্র ও পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে ১ লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও সম্মাননা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত জগতে বিশেষ অবদানের জন্য শচীন দেববর্মণ স্মৃতি পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে মনোরঞ্জন দেবকে।
ভাস্কর্য, চিত্রকলা, ফাইন আর্টস এবং গ্রামীণ চিত্রকলায় বিশেষ অবদানের জন্য ধীরেন্দ্র কৃষ্ণ দেববর্মণ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন তাপসী দেববর্মা, বাংলা ও ককবরক সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য সলিলকৃষ্ণ দেববর্মণ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন বিমান ধর, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে বিশেষ অবদানের জন্য কালীকিংকর দেববর্মণ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন জহর ব্যানার্জী, নাটক ও যাত্রাপালার বিকাশে বিশেষ অবদানের জন্য ত্রিপুরেশ মজুমদার স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন ননী দেব, বাংলা ও ককবরকে ছোটগল্পে বিশেষ অবদানের জন্য (এবছর বাংলা ভাষায় ছোটগল্পের জন্য) ভীষ্মদেব ভট্টাচার্য স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন মিলন কান্তি দত্ত, লোকসংস্কৃতির বিকাশে বিশেষ অবদানের জন্য লালন পুরস্কার পেয়েছেন শান্তনু চৌধুরী, রাধামোহন ঠাকুর স্মৃতি পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ বাংলা প্রকাশনা) পেয়েছে অববাহিকা (বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ত্রিপুরা রক্তঝরা সোনালী দিন)। দৌলত আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ ককবরক প্রকাশনা) পেয়েছে ককবরক সাহিত্য সভা (তুতেন খামেন নি পিরামিড)।
ভিজ্যুয়াল আর্টে বিশেষ অবদানের জন্য সুমঙ্গল সেন স্মৃতি পুরস্কার (যুব পুরস্কার) তুলে দেওয়া হয় সুপর্ণা দেবকে। সঙ্গীত জগতে বিশেষ অবদানের জন্য অশ্বিনী কুমার বিশ্বাস স্মৃতি পুরস্কার (যুব পুরস্কার) পেয়েছে মেঘবালিকা (সাংস্কৃতিক দল), নাটকের বিকাশে বিশেষ অবদানের জন্য অজিত মজুমদার স্মৃতি পুরস্কার (যুব পুরস্কার) পেয়েছেন নবনীতা রায়, নৃত্য ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সত্যরাম রিয়াং পুরস্কার (যুব পুরস্কার) পেয়েছেন জুস্মিতা রিয়াং।
বইমেলার সমাপ্তি দিনে সম্মাননা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে বিশেষ সাহিত্য সংস্কৃতি সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে সাহিত্যিক শ্যামল চৌধুরীকে। বিশেষ শিক্ষা সম্মাননা পেয়েছেন আব্দুল হামিদ, বিশেষ ক্রীড়া সম্মাননা পেয়েছেন রঞ্জিত ভট্টাচার্য, বিশেষ সাহিত্য সম্মাননা পেয়েছেন নকুল দাস, বিশেষ ভাষা ও সংস্কৃতি সম্মাননা পেয়েছেন কাকলি চাকমা।
বইমেলায় শ্রেষ্ঠ মন্ডপ সজ্জার জন্য পারুল প্রকাশনী, পারুল লাইব্রেরি ও মৌমিতা প্রকাশনীকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও অনুষ্ঠানে ৪০তম আগরতলা বইমেলা উপলক্ষে ফটো গ্যালারিতে ছবি প্রদর্শনে অংশ নেওয়া চিত্র সাংবাদিকদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের হাতে পুরস্কার ও সম্মাননা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, সমবায় মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল, পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা দেব সরকার, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সন্তোষ সাহা সহ অন্যান্য অতিথিগণ।