অনলাইন ডেস্ক,১ এপ্রিল।। ক্ষমতা থেকে সরতে নারাজ তিনি। এদিকে তিউনিসিয়ায় বাড়ছে ব্যাপক বিক্ষোভ। তারপরও প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ গদি থেকে সরতে নারাজ। রাষ্ট্রীয় টিভিতে তিনি ঘোষণা করেছেন যে, তিনি আট মাস আগেই ভেঙে দিচ্ছেন পার্লামেন্ট। তবুও তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না। তিনি বলেন, ‘আজ, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে, আমি রাষ্ট্র ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করার জন্য জনগণের প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি।
বুধবার তিউনিসিয়ার সংসদ সদস্যরা অনলাইনে একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন করেন। তারা প্রেসিডেন্টের ‘ব্যতিক্রমী পদক্ষেপের’ বিরুদ্ধে ভোটও দেন। তার ঠিক ঘন্টাখানেক পরে প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। অনলাইন অধিবেশনের পরে, টিউনেশিয়ার বিচারমন্ত্রী, লেইলা জেফাল অ্যাটর্নি জেনারেলকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে পার্লামেন্টের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে বলেন। জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানদের সাথে বৈঠকের পর, সাইদ বলেছিলেন যে তার সিদ্ধান্ত ছিল “তিউনিশিয়ার রাষ্ট্র এবং জনগণকে একটি ‘অভূতপূর্ব ব্যর্থ অভু্যত্থান প্রচেষ্টা” থেকে রক্ষা করা। তিউনিসিয়ার বিচার মন্ত্রী দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে বর্তমানে বিলুপ্ত পার্লামেন্টের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে বলেছেন।
বুধবার তিউনিসিয়ার সংসদ সদস্যরা অনলাইনে যে ভোটাভুটি করে, তাতে তারা চাননি প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাইস সাঈদের হাতে ক্ষমতা থাকুক। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিউনিসিয়ার বিরুদ্ধে আইন প্রণেতাদের ‘ষড়যন্ত্র’ করেছেন পার্লামেন্টারিয়নরা। ফলে পার্লামেন্ট ‘তার বৈধতা হারিয়েছে’। তিনি বলেন, “আমাদের অবশ্যই রাষ্ট্রকে বিভাজন থেকে রক্ষা করতে হবে। আমরা অপমানকারীদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের আগ্রাসন চালিয়ে যেতে দেব না।
১৮৮১ সাল থেকে টিউনেশিয়া ফ্রান্সের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৯৫৬ সালে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। আধুনিক টিউনেশিয়ার স্থপতি হাবিব বোরগুইবা দেশটিকে স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দেন এবং ৩০ বছর ধরে দেশটির রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর টিউনেশিয়া উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে স্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ইসলাম এখানকার রাষ্ট্রধর্ম । প্রায় সব তিউনিসীয় নাগরিক মুসলিম।
মধ্যপ্রাচ্যে ২০১১ সালে আরব বসন্ত নামে যে গণবিক্ষোভ ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তন শুরু হয়েছিল তার সূচনা হয়েছিল এই তিউনিসিয়াতেই। সেখান থেকে দাবানলের মতই গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল আরব বিশ্বের এক বিরাট অংশ জুড়ে, আর পরের কয়েক মাসে পতন ঘটেছিল ওই অঞ্চলের কয়েকটি শাসকগোষ্ঠীর । কিন্তু তার ১০ বছর পর সেই আরব বসন্তের সুতিকাগার তিউনিসিয়া পতিত হয়েছে গুরুতর সংকটে। যদিও সেই পটপরিবর্তনের পরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একমাত্র এই দেশটিই সাফল্য পেয়েছিল বলে মনে করা হয়।
পরে তিউনিসিয়ায় তৈরি হয় এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ এক বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিশেম মেচিচিকে বরখাস্ত করেন, স্থগিত করেন পার্লামেন্ট। এটি ছিল এমন এক পদক্ষেপ যাকে সাইয়েদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, বিশেষ করে দেশটির ইসলামপন্থীরা ‘বিপজ্জনক অভ্যূত্থান’ বলে উল্লেখ করেছেন। প্রেসিডেন্ট সাইদ অবশ্য সংবিধান উদ্ধৃত করে বলছেন, দেশে ব্যাপক গণবিক্ষোভের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাকে কিছু ব্যবস্থা নিতে হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা তারই অংশ। যে পার্লামেন্টকে সাইদ স্থগিত করেছিলেন, ক্ষমতা দখলের জন্য সেই পার্লামেন্টকেই ভেঙে দিলেন তিনি।