অনলাইন ডেস্ক, ২৯ মার্চ।। রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ফের মুখোমুখি আলোচনায় বসেছেন। আর এ আলোচনায় ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের কোনো কিছু খাওয়া বা পান করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা। এমনকি কোনো কিছু ছোঁয়া থেকেও বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
রাশিয়ার গোয়েন্দারা রাসায়নিক অস্ত্রের মাধ্যমে বা খাবারের মাধ্যমে প্রতিনিধিদের শরীরে বিষ ঢুকিয়ে দিতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে এ অনুরোধ করেছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সোমবার খবর বের হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বন্ধে বেলারুশে চলতি মাসের শুরুতে শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার সময় রুশ প্রতিনিধি দলের সদস্য আব্রামোভিচ সহ ইউক্রেনের দুইজন আলোচকের দেহে বিষ প্রয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে।
আর এ ঘটনা সামনে আসার পরই বিষ প্রয়োগের ভয়ে নিজেদের প্রতিনিধিদের এমন নির্দেশনা দেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা।
ইউক্রেনের গণমাধ্যম ইউক্রেইনা টোয়েন্টিফোরে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে কুলেবা বলেন, প্রতিনিধিদের বলা হয়েছে কোনো কিছু না খেতে, পান না করতে এবং কোনো কিছু না ছুঁতে।
সোমবার মার্কিন গণমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানায়, কিয়েভে এ মাসের শুরুতে আলোচনা করার পর রাশিয়ান ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচ ও ইউক্রেনের দুইজন প্রতিনিধির শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দেয়। তাদের তিনজনের চোখ লাল হয়ে যায় এবং অব্যহতভাবে চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কর্মকর্তা জানান, আব্রামোভিচের শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়নি। এটি মূলত পরিবেশগত কারণে হয়েছে।
কিন্তু অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা গ্রুপ বেলিংক্যাট বলছে, আব্রামোভিচ ও কয়েকজন আলোচক যেসব উপসর্গে ভুগেছেন, তা ‘রাসায়নিক অস্ত্রের বিষক্রিয়ার মতো’। বেলিংক্যাট বলছে, এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে, ‘চোখ ও ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং চোখে তীক্ষ্ম ব্যথা’।
বিবিসির নিরাপত্তা সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলেছেন, এই যুদ্ধে কোনো পক্ষ বিশেষ করে রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে- এমন সন্দেহকে যুক্তরাষ্ট্র ধামাচাপা দিতে চাইবে। তার কারণ, সেটি হলে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার একটি বাধ্যবাধকতা তৈরি হয় যা তারা একেবারেই করতে চায় না।
আব্রামোভিচ রাশিয়ার একজন ধনকুবের এবং ফুটবল ক্লাব চেলসি এফসির মালিক। শান্তি আলোচনার পর আব্রামোভিচ কয়েকদিন চোখে ব্যথা ও অস্বস্তি এবং শরীরের চামড়া উঠে যাওয়ার মত উপসর্গ নিয়ে ভুগেছেন। তিনি এখন সেরে উঠেছেন। ইউক্রেনের দুজন শান্তি আলোচকও সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, যেসব রুশ কট্টরপন্থি শান্তি আলোচনাকে বানচাল করতে চায় তারাই সন্দেহজনক এই বিষপ্রয়োগের ঘটনা ঘটিয়েছে। কারণ তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি চান।
গত রবিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আব্রামোভিচ তার দেশে রাশিয়ার হামলা সীমিত করতে তাকে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
এ মাসের শুরুতে শান্তি আলোচনা আয়োজনের জন্য মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে কয়েকদফা আসা-যাওয়া করেছেন এই রুশ বিলিয়নিয়ার।
এ মাসের শুরুতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ও তেলআবিব আব্রামোভিচের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যদিও ঘনিষ্ঠতার কথা বরাবর অস্বীকার করে এসেছেন আব্রামোভিচ।
তবে আব্রামোভিচের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তার বক্তব্য, মস্কোর সাথে শান্তি আলোচনায় আব্রামোভিচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।
রাশিয়া বলেছে, শান্তি আলোচনার প্রাথমিক পর্যায়ে আব্রামোভিচ ভূমিকা রেখেছিলেন, কিন্তু এ প্রক্রিয়া এখন কেবল দুই দেশের আলোচকদের হাতেই রয়েছে। এই আলোচনায় তার ভুমিকা এখন সীমিত।