ইউক্রেনের একটি শহর ছেড়ে চলে গেছে রাশিয়ান সেনারা

অনলাইন ডেস্ক, ২৮ মার্চ।। সাধারণ জনগণের বিক্ষোভের মুখে ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রের পাশের একটি শহর ছেড়ে চলে গেছে রাশিয়ান সেনারা। শহরের বাসিন্দাদের প্রতিবাদের পর রুশ সেনারা চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রের ঠিক বাইরে স্লাভাচ নামের ওই শহরটি ছেড়ে চলে যায় বলে জানা গেছে। শহরটি মূলত চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মীদের বাসস্থান।

শহরটির মেয়র ইউরি ফোমিচেভ সোমবার অনলাইনে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় বলেছেন, রাশিয়ার সৈন্যরা ‘যে কাজটি করতে চেয়েছিল’ তা শেষ করেছে এবং স্লাভাচ শহর ছেড়ে গেছে। অবশ্য শহর দখলের পর সেটি ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।

গত শনিবার রাশিয়ার সেনারা স্লাভাচ শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং এর মেয়রকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আটক করে। কিন্তু রাশিয়ার দখলদারিত্বের প্রতিবাদে শত শত স্থানীয় ইউক্রেনীয় বাসিন্দা পতাকা নিয়ে রাস্তায় নামেন এবং বিক্ষোভের একপর্যায়ে মেয়র ইউরি ফোমিচেভকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৯৮৬ সালেল ২৬ এপ্রিল ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দিনটি ‘চেরনোবিলের বিপর্যয়’ হিসেবে পরিচিত। সোভিয়েতের পতনের পর চেরনোবিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বর্তমান ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই পারমাণবিক দুর্ঘটনাকে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ও বিপর্যয় হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে।

ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিবিসি বলছে, বর্তমানে অফলাইনে থাকা চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করতে প্রয়োজনীয় শ্রমিকরাই মূলত পার্শ্ববর্তী স্লাভাচ শহরে বসবাস করে থাকেন।

এক মাস ধরে হামলার পরও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখল করতে না পেরে রাশিয়া ইউক্রেনর তার পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছে। গত ২৫ মার্চ রাশিয়ান সেনারা ঘোষণা করেছে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ডনবাস অঞ্চলের ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করাই হবে এখন থেকে তাদের প্রধান লক্ষ্য।

এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই রুশ সেনাদের বিশেষ ১০টি ইউনিট ইউক্রেনের অন্যান এলাকা থেকে পূর্বাঞ্চলের দিকে যাচ্ছে।

ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভ বলছেন, রাজধানী কিয়েভসহ প্রধান শহরগুলো দখলে নিয়ে তার দেশের বৈধ সরকারকে উৎখাত করতে ব্যর্থ হবার পর রাশিয়া এখন ইউক্রেনে ‘উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মত পরিস্থিতি’ সৃষ্টি করতে চাইছে।

কিরিলো বুদানভ বলেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন ‘পুরো ইউক্রেনকে গিলতে পারবেন না’, তাই তিনি পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চল এবং দেশটির বাকি অংশের মাঝখানে একটা বিভক্তি রেখা চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন।

তার মতে, রুশ অগ্রাভিযান স্থবির হয়ে পড়ার পর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অগ্রাধিকার হচ্ছে ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাংশ। তিনি এই অঞ্চলটাকে ইউক্রেনের বাকি অংশ থেকে আলাদা করে মস্কো-নিয়ন্ত্রিত একটি অঞ্চল সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছেন – অনেকটা কোরিয়া যুদ্ধের পর যেমন হয়েছিল।

জেনারেল বুদানভ বলেন, এরকম কোন রাষ্ট্র স্থাপনের চেষ্টা টেকসই হবে না, কারণ স্থানীয় জনগণ একে প্রতিহত করবে। তিনি আরো বলেন, তার দেশ শিগগিরই রুশ-অধিকৃত এলাকায় গেরিলা যুদ্ধ শুরু করবে।

তিনি বলেন, রাশিয়ার আসল সমস্যা হচ্ছে পূর্বাঞ্চল ও ক্রিমিয়ার মধ্যে একটি স্থল করিডোর প্রতিষ্ঠা ও চালু রাখা, তবে এর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মারিওপোল – যাকে কোনরকমেই ভাঙা যাচ্ছে না।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?