অনলাইন ডেস্ক, ২৬ মার্চ।। ইউক্রেনে হামলার এক মাস পুর্তিতে এসে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর শীর্ষ জেনারেল সের্গেই রুডস্কয় বলেছেন যে, ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ এর ‘প্রথম পর্যায়’ সম্পন্ন হয়েছে এবং রাশিয়ান সেনাবাহিনী এখন শুধু ‘ডনবাসের সম্পূর্ণ মুক্তি’-র দিকে মনোনিবেশ করবে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ডনবাস (দনিয়েস্ক এবং লুহানস্ক) অঞ্চলের ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করাই হবে এখন থেকে তার সৈন্যদের প্রধান লক্ষ্য।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর আগে কয়েকবার বলেছেন- ইউক্রেনে অভিযান চালানোর লক্ষ্য দেশটিকে ‘নাৎসীবাদীদের’ কবল থেকে মুক্ত করা। ফলে, অভিযান শুরুর পর থেকেই পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতিবিদরা বলছিল- ইউক্রেনের জেলেনস্কি সরকারকে উৎখাত করে দেশটিকে দখল করার জন্যই সেখানে অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া।
এতে প্রশ্ন উঠেছে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী কি ইউক্রেনে তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে? রাশিয়া কি ইউক্রেনে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার মাত্রা কমাতে বাধ্য হয়েছে?
সম্ভবত এখনই এমন সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবেনা। কিন্তু স্পষ্টতই একটি বড় পরিবর্তন আসছে। রাশিয়া সম্ভবত এখন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে পুরোপুরি মুক্ত করতে চাইছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার বলেছে তাদের ‘বিশেষ সেনা অভিযানের’ দুটো ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য ছিল – একটি পুরো ইউক্রেন এবং অন্যটি শুধুমাত্র ডনবাস।
মস্কো বলেছে যে, তার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের বিমান ও নৌবাহিনীকে ধ্বংস করা। কিন্তু তার আগ্রাসন থেমে গেছে এবং কিয়েভ এখনও ইউক্রেনের হাতে রয়ে গেছে।
ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলেও রাশিয়ার অগ্রগতির থমকে গেছে। রাজধানী কিয়েভের আশেপাশের অবস্থান থেকেও রুশ বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে ইউক্রেন সেনারা। এবং ধারণা করা হচ্ছে যে, রুশ সেনারা আরও ক্ষয়-ক্ষতি এড়াতে বা যুদ্ধ বিরতির জন্য প্রস্তুতি নিতে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নিতে শুরু করেছে।
রাশিয়া কিয়েভ দখল করার আশা ছেড়ে দিয়েছে বলে উপসংহারে পৌঁছানোর সময় সম্ভবত এখনো আসেনি। তবে পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন যে, রাশিয়া একের পর এক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে।
শুক্রবার, তারা বলেছে যে রাশিয়া তাদের আরেকজন শীর্ষ জেনারেলকে হারিয়েছে। এই নিয়ে রাশিয়ার ৭ জন জেনারেল মারা গেছে। এবং কিছু কিছু সেনা ইউনিটে মনোবল তালনিতে নেমে এসেছে। যা রাশিয়ার জন্য অনেক বড় ক্ষতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর রাশিয়া এতো বড় ক্ষতির মূখে পড়েনি।
পশ্চিমাদের বিশ্বাস রুশ জেনারেল রুডস্কয়ের ঘোষণা থেকেই প্রমাণ হয় যে, মস্কো ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছে যে, ইউক্রেনের তাদের উচ্চাভিলাষী যুদ্ধ কৌশল ব্যর্থ হয়েছে।
এক পশ্চিমা কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘নতুন লক্ষ্য ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাশিয়া স্বীকার করে নিয়েছে যে, তারা একযোগে একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে না’।
১০টির মতো নতুন রাশিয়ান ব্যাটালিয়ন কৌশলগত গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে, যারা ডনবাসের দিকে চলে যাচ্ছে।
এমনকি গত মাসে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও, পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে, রাশিয়া পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত ইউক্রেনের জয়েন্ট ফোর্সেস অপারেশন (জেএফও) গঠনকারী ইউক্রেনের সেরা যুদ্ধ ইউনিটগুলোকে ঘিরে ফেলার জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাবে।
প্রধান লক্ষ্য পরিবর্তন মানে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ নাও হতে পারে
এবার হয়তো দেখা যাবে, রাশিয়ান সৈন্যরা দনিয়েস্ক এবং লুহানস্কের অবিজিত এলাকাগুলো দখল করে নিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে সম্ভবত খারকিভ এবং ইজিয়াম থেকে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হওয়া রুশ বাহিনীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হবে।
এবং রাশিয়া যদি শেষ পর্যন্ত আজভ সাগরের মারিওপোল বন্দরকে শান্ত করতে সফল হয়, তাহলে তাদের অন্যান্য বাহিনী উত্তরে যেতে পারবে এবং ইউক্রেনের জয়েন্ট ফোর্সেস অপারেশনকে (জেএফও) পুরোপুরি ঘেরাও করে ফেলতে পারবে।
এই উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে কিছু এখনও নাগালের বাইরে বলে মনে হচ্ছে। মারিওপোলের প্রতিরোধ যোদ্ধারা তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। যা রাশিয়াকে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলোর একটি সম্পূর্ণরূপে অর্জন করতে বাধা দিচ্ছে। রাশিয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপ থেকে ডনবাস পর্যন্ত একটি নিরাপদ সড়ক পথ চায়।
তবে রাশিয়া হয়তো উপসংহারে পৌঁছেছে, একবারে একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য মনোনিবেশ করাই ভালো হবে। তাহলে সম্ভবত রাশিয়া তার অগ্নিশক্তিকে একটি জায়গায় কেন্দ্রীভূত করবে, বিশেষ করে আকাশ থেকে হামলাকে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং অনুপ্রাণিত এবং রুশ সেনাদের চাপ মোকাবেলা করার জন্য তাদের সমস্ত সাহায্যের প্রয়োজন হবে।
একজন পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমি আশা করি সেখানেই পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে’।
রাশিয়া যদি সামনের দিনগুলোতে শুধু ডনবাসের দিকেও মনোনিবেশ করে, তার মানে এই নয় যে রাশিয়া ইউক্রেনে তার হামলার উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো ত্যাগ করেছে।
এক সিনিয়র মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা সামগ্রিকভাবে আক্রমণের পুনর্মূল্যায়ন দেখতে পাচ্ছি না’।
আর তা ছাড়া রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনই ইউক্রেনের অবরুদ্ধ শহরগুলোতে হামলা চালান বন্ধ করা হবে না এবং ন্যাটো ইউক্রেনের আকাশসীমা বন্ধ করার কোনো চেষ্টা করলে রাশিয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাবে।
সুতরাং এখনই বলা যাচ্ছে না যে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের বড় লক্ষ্যগুলো থেকে পিছু হটছে।