অনলাইন ডেস্ক, ২৬ মার্চ।। বন্ধু নয়, এমন দেশগুলোকে রাশিয়া থেকে গ্যাস কিনতে গেলে ইউরো বা ডলার নয় বরং রুশ মুদ্রা রুবল দিয়েই কিনতে হবে। দুদিন আগে এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তবে পুতিনের এ পরিকল্পনা মানতে মোটেও রাজি না ফ্রান্স। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্মানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছেন, ক্রেমলিনের কৌশলের পর আমরা আমাদের বিশ্লেষণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
আমার মনে হয় রাশিয়া যা বলছে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের পর ইম্মানুয়েল ম্যাখোঁ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
জার্মানি এখনও রাশিয়ার গ্যাসের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। রাশিয়ার এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ বলছেন, আগের চুক্তিতে স্পষ্টভাবেই নির্ধারণ করা আছে যে কীভাবে গ্যাসের জন্য অর্থ প্রদান করতে হবে।
কয়েকদিন আগেই রাশিয়া বলেছে, বহু দেশ যেভাবে রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে, তারপর তাদের ওপর আর বিশ্বাস রাখা যাচ্ছে না। বলা হয়েছে, অন্য দেশের সঙ্গে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস সরবরাহ করার যে চুক্তি আছে, তা বহাল থাকবে। কেবল তেল ও গ্যাস নিতে হলে রুশ মুদ্রা রুবল দিতে হবে, ডলার বা ইউরো নয়।
ইউক্রেনে হামলার জেরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউসহ বেশ কিছু দেশ কঠোর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর ফলে রুবলের দাম খুবই কমে গিয়েছিল।
তবে পুতিনের এই সিদ্ধান্তের পর রুবলের দাম বেড়েছে।
রাশিয়ার জ্বালানি গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইউরোপ। এই মহাদেশের মোট বার্ষিক গ্যাসের চাহিদার ৪০ শতাংশ সরবরাহ আসে রাশিয়া থেকে।
ইউক্রেনে হামলার পর আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞার জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলছে। এ মুহূর্তে রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে নিষেধাজ্ঞা জর্জরিত দেশ।
কিন্তু এর পরও জার্মানি এবং ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশের আপত্তির মুখে রুশ তেল ও গ্যাস এখনও এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে। কারণ রুশ জ্বালানির ওপর, বিশেষ করে গ্যাসের ওপর, তাদের নির্ভরতা।
বুধবারও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস বলেছেন, রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে ইউরোপ অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়বে।
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রু বলেন, আমাদের মধ্যে কোনও যুদ্ধ চলছে না। নিষেধাজ্ঞা জারি হলে আমাদের উপরে যেমন তার প্রভাব পড়বে, তেমনই রুশদের আরও বড় ক্ষতি হবে। রাশিয়ার নিকটবর্তী দেশগুলি অবিলম্বে মস্কো-বিরোধী পদক্ষেপ নিতে চায়। কিন্তু বেলজিয়ামের মতো জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং নেদারল্যান্ডসও বুঝেশুনে পা ফেলার পক্ষপাতী।
তবে এই প্রশ্নও উঠেছে যে, রাশিয়া থেকে তেল কিনে কি পুতিনকে যুদ্ধের খরচ যোগাচ্ছে ইউরোপ?
ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন বলেন, ‘যত দিন আমরা রাশিয়ার থেকে জ্বালানি কিনব, তত দিন মেনে নিতে হবে, আমরাই ওদের যুদ্ধের খরচ বহন করছি। এটা একটা বড় সমস্যা’।
লাটভিয়ার প্রধানমন্ত্রী ক্রিসজানিস কারিনও বলেছেন, ‘পুতিনের অর্থনীতি, রাশিয়ার অর্থনীতিকে একঘরে করে দিতে হবে- যাতে যুদ্ধ-যন্ত্রে অর্থ আসা বন্ধ হয়’।
এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে কানাডা জানিয়েছে, তারা ইউরোপে তেল-গ্যাস রপ্তানি বাড়াতে রাজি। যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়েছে, তারা এত দিন যা জ্বালানি রপ্তানি করত ইউরোপে, তার সঙ্গে আরও ১৫০০ কোটি ঘনমিটার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পাঠাবে এ বছর।